মহুয়া ভট্টাচার্য
তিন্নি ছবি করেন কিছু বলতে চেয়ে। তাঁর ছবি আশেপাশের যে সব ঘটনা সমাজ দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেই সব বাস্তবকে তুলে ধরে সিনেমার ভাষায়।প্রেসিডেন্সি,যাদবপুরের প্রাক্তনী তরুণ পরিচালকের কাজ ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে দেশ বিদেশে। ছবিই তাঁর ভালবাসা।
ডিসেম্বর মাসের শেষ। আর দু’দিন পরেই বড়দিন। মাঝরাত। পায়ে পায়ে জানলার কাছে এসে দাঁড়ালো তিন্নি ভট্টাচার্য। পেশায় অধ্যাপিকা। কিন্তু অবকাশ কাটে ফিল্ম তৈরির ভাবনায়। ইতিমধ্যে দুটি শর্ট ফিল্ম করে ফেলেছেন। কাহিনীর রসদ গল্পের বই নয়। বাস্তব জীবন। চলমান জীবনের পাত্র পাত্রীর!ই। শীতের রাত্রিতে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে চোখে পড়ল পাহারাদার কুয়াশাচ্ছন্ন রাত্রিতে বহু তল অট্টালিকাগুলির নীচে অতন্দ্র পাহারায় পায়চারি করছে। ঘরে নিয়ন লাইটে স্বামী ও দুই মাসের কন্যা। সবাই নিরাপত্তা ও উষ্ণতায় নিশ্চিন্তের ঘুমে আচ্ছন্ন। দেখার পর থেকে আর ঘুম এল না। মনে হাজারো প্রশ্ন। এই পাহারাদারের ঘরের শিশু ও স্ত্রী সবাই কি এই বিপদসঙ্কুল নিশীথ রাতে তাঁর বস্তির ঘরে নিরাপদ? আমরা কোন সমাজে বাস করি? সেই সমাজে কোন শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বেশি? সেখানকার শিশুরা শৈশবকে কিভাবে পায়? যেমন করে পাওয়ার কথা – নিশ্চিন্ত নিরাপদ উষ্ণতায় ভরা জীবন! তথাকথিত চলমান পৃথিবীর চাহিদা অনুযায়ী! এই চাহিদা থেকে তৈরি হল indispensible । তিন্নি ভট্টাচার্য প্রেসিডেন্সি থেকে সোশিওলজি নিয়ে বি এ পাশ করে যাদবপুরে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা করেছে। জীবনের স্বপ্নই ফিল্ম করা। সমস্যা হাজারো আছে। কিন্তু আমরণ চেষ্টা চলতেই থাকে। সমাজে অসংগতি নিপীড়ন অনেক আছে। টিভি কিম্বা পেপার খুললে যে দুনিয়াকে আমরা দেখতে পাই, তাতে মন বিষন্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু তিন্নির তৈরি ফিল্ম সমস্যার মধ্যেও শেষে এমন এক আলোর রূপরেখা তৈরি করে, যাকে বলা যায় মরুভূমিতে মরুদ্যান।
এইভাবে তৈরি হল তাঁর দ্বিতীয় ছবি disconnect। সমস্ত যুবসমাজ মোবাইল জ্বরে আক্রান্ত। সবার মুখেই মুখোশ পরা। বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলতে পারছে না। এইভাবে আমরা হয়ত নতুন নতুন gadget উদ্ভাবনে পারদর্শী হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সুবিস্তৃত করেছি । কিন্তু নিজেদের মধ্যে যোগাযোগকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি। disconnect ছবিতে তিন্নি সেই বিচ্ছিন্নতাকেই তুলে ধরেছেন। কিন্তু শেষে আবার আমরা দেখতে পাই বিচ্ছিন্নতার মধ্যে মেলবন্ধন। একটি মেয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকে দেখতে পায় সবাই মোবাইলে মুখ গুঁজে রয়েছে। কারও সাথে কারও কোনও সংযোগ নেই। সবাই মুখোশ পরা। এমন সময় মেয়েটির ব্যাগ থেকে পয়সা পড়ে যায়। সবাই একবার তাকিয়ে আবার যে যার মত ব্যস্ত। এই সময় একটি মেয়ে এগিয়ে এসে পয়সাগুলো তুলে দেয়। এইভাবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়।
তিন্নির এই ছবিটির আর্থিক সহযোগিতায় ছিল Alliance francaise। কলকাতায় অনুষ্ঠিত ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবেও এই ছবিটি দেখানো হয়। এছাড়াও এই দুটি ছবি কলকাতা ও দিল্লির চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। তিন্নি এখন অনেক আশাবাদী। ওঁর নতুন ছবির কাজ চলছে। গল্প চিত্রনাট্য ও পরিচালনা তিন্নি ভট্টাচার্য । চিত্র গ্রহণ ও সম্পাদনায়় প্রভাস প্রধান।