হোমফিচারপুরোনো সেই দিনের কথা

পুরোনো সেই দিনের কথা

পুরোনো সেই দিনের কথা

অজিত মুখোপাধ্যায়

পরবর্তী অধ্যায়..

যাকগে অতসব ভেবে লাভ নেই, দাদা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে, শুকনো মুড়ির সাথে গোবিন্দর দোকানের তেলেভাজা হয়তো জুটতে পারে। মুড়ি তেলেভাজার মধ্যে সেদিন রবীন্দ্রনাথকে হারিয়ে আবার খেলায় মন দিলাম।

আকাশবাণীর নাট্য বিভাগের তিন মূর্তি, অজিত মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ বসু ও শুক্লা বন্দোপাধ্যায়

যাই হোক যে কথা বলেছিলাম, আজ আকাশবাণীর চাকচিক্য অনেকটাই বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে টেকনিক্যাল ফেসিলিটি, কিন্তু হারিয়ে গেছে গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলো। একথা বললাম ,কারণ, আজকের প্রজন্মের অনেকেই হয়তো আকাশবাণীর ঐতিহ্যময় দিনগুলির কথা জানেন না। এককথায়, আকাশবাণী ছিল আমাদের সংস্কৃতির পীঠস্থান।

বেতার নাটক আলোয় ফেরা কাহিনী সমরেশ বসু , অলোক নাথ দে ( মিউজিক ডিরেক্টর ) শক্তি ঠাকুর, আজিত মুখোপাধ্যায় ( প্রযোজক) বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় নাটক) সন্ধ্যা চক্রবর্তী ( নাট্য শিল্পী)

All India Radio-র বাড়িটা সম্বন্ধে হয়তো অনেকেরই জানা নেই। কোথায় ছিল? কিরকম দেখতে ছিল? ডালহৌসি স্কোয়ার টেলিফোন ভবনের উল্টোদিকে PTI-এর পাশ দিয়ে অপরিসর বাস্তারটির নামই Garstin Place। এই রাস্তা দিয়ে সোজা নাক বরাবর তিন তলা পুরোনো আমার বাড়ির ঠিকানা ১ নম্বর। PTI-কে বাঁদিকে রেখে সোজা হেঁটে গেলেই দুদিকে অবাঙালিদের ছোট ছোট দোকান বা ঠেক। এর মাঝখান দিয়ে সোজা হেঁটে গেলেই কালো Board-এর ওপর সাদা হরফে লেখা All India Radio। লেখার নিচে বড় আকারের লোহার গেট পার হয়ে গেলেই চোখে পড়বে ইট দিয়ে বাঁধানো ছোট একটি Lawn. বাঁদিকে একতলা শেড দেওয়া বেতার জগতের অফিস। অবশ্য আজ বিলুপ্ত বেতার জগতের কথা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারবেন না। “বেতার জগৎ” ছিল একটি পাক্ষিক পত্রিকা, যার মধ্যে আকাশবাণীর দৈনন্দিন অনুষ্ঠানের নাম,বিষয় ও শিল্পীর নামের উল্লেখ থাকতো আর। আর থাকতো আকাশবাণীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি, বেতারে প্রচারিত কথিকা ও নামকরা সাহিত্যের লেখা। মোট কথা বেতার সংক্রান্ত একটি সম্পূর্ণ তথ্য পত্রিকা। তখন Editor ছিলেন G.C Chakarvarti. Lawn -এর ডানদিকটায় ছিল সুকুমার মুখার্জির ক্যান্টিন । আকাশবাণী ভবনে যাওয়ার কিছু পরে ক্যান্টিনটা কো-অপারেটিভ হয়ে যায়, যা আজও বর্তমান।

মাননীয় মন্ত্রী সাধন পান্ডের হাত থেকে নাগরিক সম্বর্ধনা গ্রহণ

সোজা তাকালেই পুরোনো আমলের একটা তিনতলা বাড়ি। ব্রিটিশ আমলের তৈরি বিশাল কাঠের গেট দিয়ে ঢুকে পড়লাম। সামনেই অর্ধগোকৃতি বার্মা সেগুনের বিশাল একটি Counter, এটাও বিদেশী ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। Counter -এর ভিতর একজন বসে আছে। ছোট্ট খাটো দেখতে কিন্তু গাল ভরা Name Plate- লেখা আছে Studio Commissioner. পরবর্তী কালে জেনেছিলাম- British আমলের Designation টাই ছিল সর্বস্ব- আসলে পদটি ছিল Studio Attendent. ডানদিকে Duty Room । ওখানে Duty Officier কাজে ব্যস্ত, বাঁদিকে Controll Room, যেখান থেকে সমস্ত Programme নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সোজা চলে গেলে পাওয়া যাবে লাল-সবুজ Carpet-এ মোড়া সুসজ্জিত কয়েকটি Studio। একটি Music Studio-তে British আমলের বিশাল একটি পিয়ানো। সব Studio গুলোই Central Ac। প্রসঙ্গত , বলে রাখি তখন কলকাতা শহরে AC-র সংখ্যা ছিল সীমিত।

দীপঙ্কর দের সংগে একটি বেতার নাটক অভিনয়ের সময়

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় ওঠার সময় দেখতে পেলাম, সিঁড়ির নিচে খুব ছোট্ট একটা স্টুডিও। এখান থেকে মাঝেমধ্যেই সংবাদ পাঠ ও announcement করা হতো। তখন স্থানীয় সংবাদ পাঠ করতেন বিচু বন্দ্যোপাধ্যায়, ঘোষণায় ছিলেন নজরুল পুত্র কাজী সব্যসাচী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ইন্দিরা দেবী, জয়ন্ত চৌধুরী, ভুবন মুখোপাধ্যায়, আরও অনেকে ছিলেন। তাদের নাম মনে করতে পারছি না।

আকাশবাণীর স্টুডিওতে নাটক প্রযোজনার সময়

সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠলেই বাঁদিকে Station Director B.K. Nandee র Chamber। চেহারায়, চলনে বলনে একেবারে পাক্কা সাহেব।

ক্রমশ…(To be Continue..)

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img