(CRIME REPORTER: এই পর্বে শোনানো হবে নানান অপরাধ কাহিনী। বিভিন্ন রহস্যজনক ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বিখ্যাত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর তদন্তের রোমহর্ষক গল্প। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর গোপনে খবর সংগ্রহের গল্প আড্ডার মত করে উঠে আসবে বিশিষ্ট সাংবাদিক হীরক কর -এর কলমে।)
হীরক কর : এ এক অদ্ভুত কাহিনী। কোন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অপরাধে দুই দেশে গ্রেফতারি ও মামলা হয়েছে। দুই দেশে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটা সারা পৃথিবীতে একমাত্র বিরল ঘটনা। ভারতে যেমন তাঁকে সাজা শোনানো হয়, তেমনই পাকিস্তানের কোর্টও তাঁকে শাস্তি দেয়। ধারাগুলো প্রায় একই রকম। দেশদ্রোহিতার মামলা।
মজা হল, একই ব্যক্তি দুটো এজেন্সির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা “র” কিভাবে বেকুব বানিয়ে দেয় সেটাও এই কাহিনীর একটা অংশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীও লড়াই করেছিল। সহায়তা করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের। তাই ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনাকে আত্মসমর্পণ করিয়েছিল ভারতীয় সেনা।
এই কাহিনী বাংলাদেশ যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এই ঘটনার বড় ভূমিকা আছে। হয়তো এই ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশকে এত তাড়াতাড়ি স্বাধীন করা সম্ভব হতো না। কীভাবে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর এক এজেন্ট পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্ট হয়ে যায়। এবং ভারতকে ধোঁকা দেয়। আবার সেই এজেন্টই “র”- এর জন্য কাজ করতে থাকে। আইএসআইকেও ধোঁকা দেয়। অর্থাৎ দুপক্ষকেই ধোঁকা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর জন্যই ভারত বড় সাফল্য পেয়েছিল। প্রথমত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেবার জন্য।
এই কাহিনী হাশিম কুরেশির, যিনি এখন জম্মু-কাশ্মীর ডেমোক্রেটিক লিবারেশন পার্টির(জেকেডিএলপি) চেয়ারম্যান। 1953 সালের পয়লা অক্টোবর, শ্রীনগরের একটি বর্ধিষ্ণু পরিবারে তাঁর জন্ম। হাশিম কুরেশি যেহেতু পাকিস্তানে থাকতেন। তাই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তাঁর প্রচুর আত্মীয়-স্বজনও থাকতেন। ১৯৬৯-এ পেশোয়ারে কোন আত্মীয়ের বিয়ে ছিল। সেখানে হাশিম কুরেশি যান। সেখানে মকবুল ভাটের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। যিনি সেই সময় ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এই সেই মকবুল ভাট, পরে যার তিহার জেলে ফাঁসি হয়েছিল। যাই হোক, ওই বিয়েতে তাদের মধ্যে পরিচয় হওয়ার পর তাঁরা আজাদ কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করেন। কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনে হাশিম কুরেশিকে সামিল করারও কথা বলা হয়। এই সময়ে তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। হাশিম কুরেশিকে বলা হয়, তুমি কাশ্মীরের জন্য কাজ করো। আইএসআইয়ের এক পাইলট হাশিম কুরেশিকে প্রশিক্ষণ দেন। এবং তাঁকে একটি প্লেন হাইজ্যাক করতে বলা হয়। সেই প্লেন যা উড়িয়ে নিয়ে যাবেন রাজীব গান্ধী। কেননা সেই সময় তিনি পাইলট ছিলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
হাশিম কুরেশি যখন ধীরে ধীরে কাশ্মীরে কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখছিলেন তখন বিএসএফের অফিসারদের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে “র”-এর পরিচয় হয়। তাঁকে বলা হয় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যেতে। এবং আমাদের এজেন্সির হয়ে কাজ করতে। কারণ তিনি পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে খুব ভালো হবে জানতেন। তাই উনি “র” -এর তরফ থেকে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তারপরেই তাঁর সঙ্গে মকবুল ভাট এবং আইএসআইয়ের অফিসারদের পরিচয় হয়। তাঁরা বলেন, তুমি আমাদের জন্য কাজ করো। এরপর হাশিম কুরেশিকে টার্গেট দেওয়া হয় তুমি প্লেন হাইজ্যাক করো।
এই প্লেন হাইজ্যাকের পিছনে একটা কাহিনী ছিল। ওই সময় এনএলএফ এবং ওই ধরনের সংগঠনের মধ্যে একটা নতুন সংগঠন “আলফাতা” তৈরি হয়েছিল। এ সময় উপত্যকায় আলফাতার ৩৬ জনকে বিএসএফ গ্রেফতার করেছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরের বাকি সংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ ছিল। দাবি ছিল, এই ৩৬ জনকে ছেড়ে দিতে হবে। তাই এদের মুক্ত করার জন্য প্লেন হাইজ্যাকের পরিকল্পনা করা হয়। মনে করা হয়েছিল, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের প্লেন হাইজ্যাক হবে, তাই তাদের দাবি ভারত সরকার মেনে নেবে। হাইজ্যাকের মাধ্যমে আলফাতার লোকদের ছাড়ানো সম্ভব হবে।
হাশিম কুরেশিকে “র” পাকিস্তানে পাঠালেও তিনি আইএসআইয়ের কব্জায় পড়ে যান। এবং তাদের হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। আজাদ কাশ্মীরের নামে তাঁর পুরো মগজ ধোলাই করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানে তিনি “র “এর এজেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওখানে গিয়ে আইএসআইয়ের এজেন্ট হয়ে যান। এবং তাদের গোপন খবর দিতে শুরু করেন। প্রশিক্ষণের পর উনি কাশ্মীরে ফিরে আসেন। কিন্তু তাঁকে বিএসএফ গ্রেফতার করে। বিএসএফ যখন হাশিম কুরেশিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন তিনি একেবারেই ভেঙে পড়েন। বলেন, পাকিস্তানি গিয়ে কিভাবে আইএসআইয়ের কব্জায় চলে গিয়েছিলেন। এবং পাকিস্তান পরিকল্পনা করেছে একটি ভারতীয় প্লেন হাইজ্যাক করবে। প্লেনটি হাইজ্যাক করার পর ৩৬ জন আলতাফ সদস্যকে ছেড়ে দেবার দাবি রাখা হবে। এই খবর দিল্লিতে “র”য়ের সদর দফতরে এসে পৌঁছয়। “র” এবং বিএসএফ মিলে হাশিম কুরেশির সঙ্গে কথা বলে।
বলা হয়, ফাঁসির সাজা থেকে তোমাকে বাঁচতে হলে, আমরা যেমন বলছি তুমি সেই রকম করো। পাকিস্তান তোমাকে যেভাবে হাইজ্যাক করতে বলেছে, তেমনভাবেই প্লেন হাইজ্যাক করো। কিন্তু আমরা যেভাবে বলবো ঠিক সেই পদ্ধতিতে করতে হবে। এরপর প্লেন হাইজ্যাকের প্রস্তুতি শুরু হয়। ওই সময়ে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটা প্লেন ছিল “গঙ্গা” নামে। ফকার এফ 27 ফ্রেন্ডশিপ মডেলের বিমান খুব পুরনো হয়ে গিয়েছিল বলে ফ্লাই করতো না। কিন্তু এরপর ‘গঙ্গা’কে ওড়ানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। শ্রীনগর থেকে জম্মু ‘গঙ্গা’কে ফ্রাই করার পরিকল্পনা করা হয়। হাশিম কুরেশি এবং তাঁর কাজিন আশরাফ কুরেশিকে নকল খেলনার মতো বন্দুক দেয়া হয়। দেওয়া হয়, নকল গ্রেনেডও। যাতে আইএসআইয়ের মনে হয় প্লেনটা হাইজ্যাক হয়ে গেছে। কিন্তু আদতে সেটা হাইজ্যাক নয়।
৩০ জানুয়ারি, ১৯৭১। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের প্লেন “গঙ্গা” শ্রীনগর থেকে জম্মুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেটাকে কিডন্যাপ করা হয়। লাহোরে নামার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। পাকিস্তানি অথরিটি সঙ্গে সঙ্গে লাহোর বিমানবন্দরে অবতরণ করার অনুমোদন দিয়ে দেয়। সেসময় বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ। সদ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনার লাগাতার জুলুম চলছিল। আর ওখানে যেসব রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছচ্ছিল, তা পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছিল ভারতেরই আকাশ পথে। যেহেতু পুরো ঘটনাটা “র”-এর জানা ছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গে ‘আকাশবাণী’ প্লেন হাইজ্যাকের খবর প্রচার করে দেয়। প্লেন হাইজ্যাক হয়েছে জানা সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের জমিতে সেটি অবতরণ করার অনুমতিও দিয়ে দেয়। প্লেনটি লাহোর বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরই পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টো (যিনি পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন) সঙ্গে সঙ্গে লাহোর বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। হাইজ্যাককারি হাশিম কুরেশি এবং আশরাফ কুরেশিকে হিরোর মত স্বাগত জানান। পরে আশরাফ কুরেশি এক জবানবন্দিতে বলেছিল, ওর জানা ছিলো না যে, প্লেন বেশি ইম্পর্টেন্ট ছিল, না ওখানে বসে থাকা ৩০ জন যাত্রী গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ততক্ষণে সারা পৃথিবী আকাশবাণীর মাধ্যমে খবর পেয়ে গেছে, এইরকম একটা প্লেন হাইজ্যাক হয়েছে। ওরা আলফাতের ৩৬ জনকে মুক্ত করার দাবি জানায়। এবং বলে, তাদের পরিবারের লোকজনের ওপর যেন অত্যাচার না করা হয়। কয়েক ঘন্টা পরে ওই প্লেনের ৩০ জন যাত্রীকে নামিয়ে আনা হয়। আর হাইজ্যাকারারও তাদের ছেড়ে দেন। ওই যাত্রীদের রাস্তা দিয়ে ওয়াগা বর্ডার অমৃতসর হয়ে ভারতে পাঠানো হয়। লাহোর বিমানবন্দরে তখন শুধু ওই “গঙ্গা” বিমান দাঁড়িয়েছিল। প্রায় ৮০ ঘন্টা পরে পাকিস্তানি অথরিটির ইশারায় হাইজ্যাকাররা ওই “গঙ্গা” বিমানে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিমানটি ধু ধু করে জ্বলতে থাকে।
হাইজ্যাক হওয়া বিমানকে এইভাবে নিজেদের জমিতে অবতরণ করতে দেওয়া, তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার জন্য মদত দেওয়া, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফায়দা তোলে ভারত। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আকাশসীমায় পাকিস্তানের বিমান ওড়ার অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয় দিল্লি। এর ফলে পাকিস্তানকে পূর্ব পাকিস্তানে তিনগুণ বেশি পথ ঘুরে যেতে হচ্ছিল। তিনগুণ বেশি জ্বালানিও খরচ করতে হচ্ছিল। এতে সময় লাগছিল বেশি। পাকিস্তান থেকে সরাসরি গেলে, পূর্ব পাকিস্তানে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছানো যায়। কিন্তু ভারত আকাশসীমা দিয়ে পাকিস্তানের বিমান ওড়া বন্ধ করে দেওয়ায় ওরা অসুবিধায় পড়ে গিয়েছিল। তাই পাকিস্তান এর বিরোধিতা করে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ চলছে। তাই পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের রসদ হাতিয়ার ইত্যাদি পাঠানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। আর ভারত এটাই চাইছিল। পরে মুক্তিযুদ্ধে এর সাফল্য ভারত পায়।
প্রথমে তো হাশিম কুরেশি এবং আশরাফ কুরেশিকে জুলফিকার আলি ভুট্টো জননায়কের মত সম্মান জানান। কিন্তু পরে পাকিস্তান বুঝতে পারে, প্লেন হাইজ্যাকের ব্যাপারটা পুরোটাই নাটক। পাকিস্তান একটা এক সদস্যের কমিটি করে। সেই কমিটি রিপোর্ট দেয়। ওই রিপোর্টে বলা হয়, আসলে হাশিম এবং আশরাফ ভারতীয় এজেন্ট হয়ে এই কাজ করেছে। এসবই ছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা “র”এর পরিকল্পনা। পাকিস্তানের জন্য ভারতের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়াই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। যখন পুরো বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায় তখন পাকিস্থানে প্রায় তিরিশ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে হাশিম কুরেশিও ছিল। আশরাফ এবং মকবুল ভাটকেও গ্রেফতার করা হয়।
পাকিস্তানের আদালতে মামলা চলে ৭ জন বাদে সবাইকে রেহাই করে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজনকে সাজা দেওয়া হয়। ৭ বছরের জেল। ওই সাজা ভোগ করেন হাশিম কুরেশি। কিন্তু সমান অপরাধ করা সত্ত্বেও আশরাফ কুরেশিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়া হয় মকবুল ভাটকেও। ওই সময় হাশিম কুরেশি পাকিস্থানে বিয়েটাও সেরে ফেলেছিলেন। সাজা ভোগ করার পর হাশিম কুরেশি পাকিস্তান থেকে কানাডা চলে যান। প্রায় ৩০ বছর পর ২০০০ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাশিম কুরেশি ভারতে ফেরেন। তিনি দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করেন। দিল্লি পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাকড়াও করে। এরপরে ভারতেও তার বিরুদ্ধে মামলা চালানো হয়। অভিযোগ আনা হয় হাইজাকিং এবং দেশদ্রোহিতার। এই কেস ট্রান্সফার করে দেওয়া হয় জম্মু-কাশ্মীরের আদালতে। ২০০১ সালে তিনি জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছলে ফের জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এক বছর জেল খেটে জামিন পাওয়ার পর মামলা চলতেই থাকে। কাশ্মীরে ঠিক পাকিস্তানের মত একই মামলা চলছিল। মকবুল ভাটও ওই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। মকবুল ভাট এবং হাশিম কুরেশি এমন দুজন ব্যক্তি, যাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে এবং ভারতে প্রায় একইরকম ধারায় একই রকম অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাই হাশিম কুরেশির আবেদন ছিল, যেহেতু একই অপরাধে তিনি অন্য দেশে সাজা খেটে এসেছেন, সেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলা চালানো অন্যায়। কেননা আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, একই ব্যক্তি একই অপরাধে দুবার সাজা পেতে পারেন না। এরপর হাশমি কুরেশিকে আদালত রেহাই করে দেয়। এরপর তিনি কাশ্মীরে বই এবং খবরের কাগজে লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ।
এই পুরো মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পাকিস্তান লাগাতার বলে যাচ্ছিল, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের যে প্লেন হাইজ্যাক হয়েছিল, সেটা ছিল ভারতের চক্রান্ত। পাল্টা ভারত সরকার বলে, না, পাকিস্তান তাদের জমিতে কিভাবে উগ্রপন্থাকে উৎসাহ দেয়, এটা তার উদাহরণ। পাকিস্তান শুধু আমাদের প্লেন হাইজ্যাকই করেনি। আমাদের প্লেনে আগুনও লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায়, এমন এক গুপ্তচর ছিল, বৈরী দেশের এজেন্সির হয়ে পৃথক পৃথক সময়ে কাজ করেছে। “র”-এর জন্য করেছে। আইএসআই-এর জন্যও করেছে। যখন “র” এর জন্য কাজ করছিল তখন আইএসআই তার ব্রেন ওয়াশ করে দিয়েছে। যখন আইএসআই হাত থেকে বেরিয়ে ভারতে এসেছে, তখন “র”-এর কব্জায় পড়ে গেছে।
এরপর ভারতে মকবুল ভাটকে গ্রেফতার করা হয়। এবং তিহার জেলে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। হাশিম কুরেশি আইএসআই এবং “র”; দুটো এজেন্সির জন্য কাজ করলেও তার জন্যই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ভালো অবস্থান নিতে পেরেছিল। পাকিস্তানের জন্য ভারতের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাতে অসুবিধায় পড়ে ছিল পাকিস্তান। সাফল্য পেয়েছিল ভারত। ভারত খুব সহজেই পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বলে একটি স্বাধীন নতুন রাষ্ট্রে পরিণত করতে পেরেছিল। ওই প্লেন হাইজ্যাক না হলে হয়তো একাত্তরের যুদ্ধ আরও বেশি দিন চলত।