হোমদেশরাজ্যে রাজ্যে বিজেপির ব্যর্থতাই তৃণমূলের অস্ত্র, পাল্লা ভারী মমতারই

রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির ব্যর্থতাই তৃণমূলের অস্ত্র, পাল্লা ভারী মমতারই

রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির ব্যর্থতাই তৃণমূলের অস্ত্র, পাল্লা ভারী মমতারই

নির্বাচনী ইশতেহারে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সোনার বাংলা সঙ্কল্প পত্র’। মহিলা ভোটব্যাঙ্কের দিকে নজর রেখে সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া, ১৮ বছর হলেই মহিলাদের এককালীন ২ লাখ টাকা করে সাহায্য, কেজি থেকে এমএ পর্যন্ত মেয়েদের বিনাখরচে পড়াশোনা, সরকারি বাসে মহিলাদের পুরোপুরি বিনা ভাড়ায় যাতায়াত, পরিবার পিছু একজনের চাকরি, তফসিলি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নিলেই ৫০ হাজার টাকার বন্ড, ১৮ বছর বয়সের পরে বিয়ে হলেই এই শ্রেণির পরিবারের মহিলাদের জন্য ১ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট। রয়েছে আরও বহু প্রতিশ্রুতি। তবে বিজেপির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু দিয়েছে। কারণ, বিজেপি শাসিত পাশের রাজ্য ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যই এমন কোনও নজির গড়তে পারেননি, যা অন্য রাজ্যগুলির কাছে মডেল হতে পারে।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সাথী সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক প্রকল্প ভোটের দৌড়ে তৃণমূলকে এগিয়ে রাখছে।

এবারের ভোট বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রচারে বারবার রাজ্যে ছুটে আসছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানে নামার আগেই যে ছবিটা ধরা পড়ছে, তা বিজেপির পক্ষে মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়।

প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্রকে চৌরঙ্গী কেন্দ্রে দাঁড় করিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব নিজেদের হাসির পাত্র করে তুলেছেন। শিখাদেবী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপির কেউ নন। বিজেপির নীতি-আদর্শে তিনি বিশ্বাসও করেন না। প্রার্থী করার আগে তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনাও হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিখাদেবী।

একইভাবে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক মালা সাহার স্বামী তরুণ সাহাকে। তরুণবাবু জানিয়েছেন, তিনি তৃণমূলে ছিলেন। তৃণমূলেই থাকবেন। এভাবে প্রার্থী তালিকায় তৃণমূলীদের ঢুকিয়ে নিজের মুখ নিজেই পোড়াল বিজেপি।

ভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি শিবিরে অগোছালো চেহারাটা তত প্রকট হয়ে উঠছে। তার ওপর রয়েছে দলের নীচের তলার নেতাদের বিদ্রোহ এবং গোষ্ঠী কোন্দল। অনেক নেতাই এখন নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। দলের সভাগুলিতেও এখন আর আগের মত ভিড় দেখা যাচ্ছে না। লোক না হওয়ায় সভাস্থলে না এসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন অমিত শাহ, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি এই মুহূর্তে বেশ কিছু অস্বস্তিকর ইস্যু বিজেপিকে বিব্রত করে তুলেছে, যা ভোটযন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। সিএএ, এনআরসি নিয়ে এখন চুপ থাকার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র। আর এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ মতুয়া সম্প্রদায়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে মতুয়াদের বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানালে, তা বিজেপির পক্ষে ব্যুমেরাং হতে পারে।

জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে। পেট্রোলের দাম লিটারে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দামও ক্রমশ হাজারের দিকে এগোচ্ছে। এ নিয়ে ভোটারদের সামনে কোনও জুতসই ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না দলের নেতারা।

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী, বিনামূল্যে রেশন সহ বিভিন্ন প্রকল্প ভোটারদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। স্বাস্থ্যসাথীর বিকল্প হিসেবে বিজেপি আয়ুষ্মান ভারতের কথা তুলে ধরলেও, তা খুব একটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কারণ, এই প্রকল্পে কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ অর্থ। বাকিটা গ্রাহকের। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সাথীতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসা মেলে, যা মমতার মাস্টার স্ট্রোক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

এছাড়া, মমতার মোকাবিলায় এখনও পর্যন্ত পাল্টা কোনও মুখ ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে পারেননি। মিঠুন চক্রবর্তীকে দলে টানলেও, রাজনীতির মঞ্চে তিনি কতটা গ্রহণযোগ্য হবেন, সে প্রশ্ন থাকছেই।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img