হোমPlot1কেন ওয়াকফ বিল নিয়ে এত বিতর্ক, কী রয়েছে সংশোধনীতে?

কেন ওয়াকফ বিল নিয়ে এত বিতর্ক, কী রয়েছে সংশোধনীতে?

কেন ওয়াকফ বিল নিয়ে এত বিতর্ক, কী রয়েছে সংশোধনীতে?

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, ওয়াকফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব করে ওয়াকফ সম্পত্তির দখল নিতে চাইছে।  ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিমদের রাখা নিয়েও মুসলিমদের একাংশের আপত্তি রয়েছে।

অন্যদিকে, সরকারের যুক্তি হল, বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনওরকম পর্যালোচনা করার সুযোগ নেই। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। বিজেপির বক্তব্য, ওয়াকফ সম্পত্তির সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মুসলিমরা। নতুন আইন কার্যকর হলে সাধারণ মুসলিমরা উপকৃত হবেন।

কিন্তু কী এই ওয়াকফ? মুসলিমরা তাদের সম্পত্তির কিছুটা অংশ ধর্মীয় কাজে ও মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য দান করে থাকেন। খুব সহজ করে বললে, এটাই হল ওয়াকফ। এই সম্পত্তি থেকে আয় মসজিদের খরচ চালানো, শিক্ষার কাজে ব্যবহার, অনাথদের সাহায্য করার কাজে ব্যয় করা হতে পারে। এইসব সম্পত্তি পরিচালনা করার জন্যে রয়েছে ওয়াকফ বোর্ড।

বর্তমান ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের দখল করা সম্পত্তি বা জমিতে কোনওরকম সরকারি পর্যালোচনা ছাড়াই ওয়াকফ বোর্ড জমি দখল করতে পারে। কোনও সম্পত্তি নিয়ে ব্যক্তিগত মালিকানা এবং ওয়াকফ বোর্ডের আইনি বিবাদ চললেও তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না সরকার।

কিন্তু নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের  একচ্ছত্র অধিকার খর্ব করে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিককে।

নতুন বিলে ওয়াকফ বোর্ডে দুই অ-মুসলিম সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আপত্তি উঠেছে। পুরনো আইন অনুযায়ী, কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করলে, চিরদিনের জন্য সেটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবেই থেকে যেত। নতুন বিল পাশ হলে, এবার সেটিকেও চ্যালেঞ্জ করা যাবে।

কী কী রয়েছে সংশোধনীতে?
১। ওয়াকফ থেকে ট্রাস্টকে আলাদা করা: মুসলিমদের তৈরি কোনও ট্রাস্ট কোনও আইনে ওয়াকফ বলে বিবেচ্য হবে না। ট্রাস্টের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম হবে।

২। ওয়াকফ সম্পত্তি কাকে বিবেচিত হবে: অন্তত পাঁচ বছর মুসলিম ধর্মান্তপ্রাণ ব্যক্তি ওয়াকফকে জমি ও সম্পত্তি দান করতে পারবেন। ২০১৩ সালের আগে আইনে এই বলবৎ ছিল।

৩। মহিলাদের অধিকার: কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ করার আগে সেই সম্পত্তির কোনও মহিলা উত্তরাধিকার যদি থাকেন তাহলে তাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে। বিধবা, অনাথ ও বিবাহ বিচ্ছিন্ন মহিলাদের স্বার্থ দেখতে হবে।

৪। সরকারি জমি ও ওয়াকফ সম্পত্তি: জেলাশাসকের ঊর্ধ্বে কোনও অফিসার ওয়াকফ সম্পত্তি বিবাদের তদন্ত করতে পারবেন। ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালকে আরও শক্তিশালী করা।

৫। বার্ষিক অনুদানের পরিমাণ কমানো: ওয়াকফ সংস্থার বাধ্যতামূলক অর্থসাহায্যের পরিমাণ বার্ষিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা।

৬। বার্ষিক অডিট সংস্কার: ওয়াকফ সম্পত্তির আয় যদি ১ লাখ টাকার উপরে হয়, তাহলে সেই আয়ের অডিট করাতে হবে। ওই অডিট করবেন রাজ্যের অডিটররা।

৭। প্রযুক্তি ও কেন্দ্রীয় পোর্টাল: ওয়াকফ সম্পত্তি নিরূপণ ও বিবাদ-মীমাংসায় একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল গঠন করা হবে। এই পোর্টালে সম্পত্তির একটি অটোমেটেড ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা গঠন করে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে।

৮। দুর্নীতিমুক্ত ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট: মুতাওয়ালিদের সম্পত্তির পরিমাণ ৬ মাসের মধ্যে পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হবে। যারা মোতোয়াল্লি বা দেখভাল করেন তাদের ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের ওয়ারফ বোর্ডে ২ জন অমুসলিম প্রতিনিধি থাকবেন। আইনি জটিলতা এড়াতে ওয়াকফ সম্পত্তিতে ১৯৬৩ সালের লিমিটেশন আইন বলবত হবে।

যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে ঘোষণা করা যাবে না। গোটা দেশে মোট ৮.৭ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। ভারতীয় রেল ও সেনাবাহিনীর পরই দেশে ওয়াকফের বেশি সম্পত্তি রয়েছে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img