জীব বৈচিত্র্য আজ বিপন্ন। পরিবেশপ্রেমীদের মতে, এর জন্য দায়ী হল, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস, প্রাণিকূলের আবাসস্থলে মানুষের আনাগোনা, তাদের অত্যধিক পণ্যায়ন, বন্যপ্রাণির বেআইনি বিক্রি ও ব্যবসা, দূষণবৃদ্ধি এবং জলবায়ুর পরিবর্তন। IUCN একটি অগ্রগণ্য আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা বিভিন্ন প্রাণী প্রজাতিকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে একই সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়পূরণ ও সংরক্ষণের জন্য সচেষ্ট।
প্রাতঃভ্রমণকারী এবং সরোবরপ্রেমীদের পক্ষ থেকে পরিবেশবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র্য পর্ষদে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। রবীন্দ্র সরোবরের অতুলনীয় জীব বৈচিত্র্য এবং সংলগ্ন এলাকার বাস্তুতন্ত্রের সংবেদনশীলতাকে মাথায় রেখে এটিকে একটি জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে তিনি কিছু তথ্যও যুক্ত করেছেন, যেগুলি পর্ষদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিবেশপ্রেমীদের মতে, রবীন্দ্র সরোবরের বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এই সরোবরের অত্যন্ত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রয়েছে এবং এটি সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের আধার। এর জীব এবং উদ্ভিদ তন্ত্রে স্বাতন্ত্র্য রয়েছে।
এবার পরিবেশবিদ হিসেবে সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক এবং রাজ্য পর্ষদের হস্তক্ষেপে এই সরোবরকে একটি জীব বৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় পরিবেশ আদালত বিভিন্ন মামলায় এই সরোবরের জীব বৈচিত্র্য বা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়, এমন কোনও কাজ থেকে বিরত থাকার আগেই জারি করেছে।
রবীন্দ্র সরোবরকে অনন্য হিসেবে বিবেচনার জন্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন এর মোট আয়তন প্রায়১৯২ একর। এর মধ্যে ঘন সবুজে ঘেরা ৭৩ একর সুবিশাল জলাভূমি রয়েছে। এখন তা রোয়িং, সাঁতার, দৌড়নো এবং পক্ষী পর্যবেক্ষণের আদর্শ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জীব ও উদ্ভিদকূল পর্যবেক্ষণে এই সরোবরে ৩৬৬টি জলজ উদ্ভিদের প্রজাতি খুঁজে পাওয়া গেছে। এছাড়াও এই সরোবরে প্রায় ৭০০০টি গাছের আশ্রয় হয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ভাসমান উদ্ভিদ, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পদ্ম, ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ উদ্ভিদ। রেড ভেন্টেড বুলবুল বিরল প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, সারস ও বকের সমাহার এই সরোবরকে অনন্য করে তুলেছে। তাই এখন এই সরোবরকে সুরক্ষিত রাখতে এই অঞ্চলকে অবিলম্বে জীব বৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা।