হোমরাজ্যস্প্যানিশ ফ্লু ও রবীন্দ্রনাথের দাওয়াই 'পঞ্চটীকা পাঁচন'

স্প্যানিশ ফ্লু ও রবীন্দ্রনাথের দাওয়াই ‘পঞ্চটীকা পাঁচন’

স্প্যানিশ ফ্লু ও রবীন্দ্রনাথের দাওয়াই ‘পঞ্চটীকা পাঁচন’

দেবস্মিতা নাগ
সন ১৯১৮র ২৯শে মে। আজ থেকে শতবর্ষ আগের কথা। বম্বে বন্দরের তটে ভিড়ল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ ফেরত ভারতীয় সৈন্য বোঝাই এক জাহাজ। ঘরে ফেরার আনন্দে আত্মহারা সৈনিকরা জানতেনই না, তাঁরা তাঁদের দেহে বহন করে এনেছেন এক সাংঘাতিক মারণ ভাইরাস। প্রথমে সারা বম্বে ও পরে সারা দেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল সেই ভাইরাস।

শুধু ভারতেই ১কোটি ৮০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এই ‘যুদ্ধ জ্বর’ বা “war fever”। এই মৃত্যুর সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত মানুষের সংখ্যাকেও পিছনে ফেলে দেয়।

সেই সময় রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতনের আশ্রমেও ছড়িয়ে পড়ে এই ফ্লু। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক চেহারাটা অনেকের কাছেই অপরিচিত। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত আয়ুর্বেদ শাস্ত্র চর্চা করতেন। নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতেন। সেই সব পরীক্ষায় সাফল্য এলে উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন।

ফ্লুয়ে আক্রান্ত আশ্রমিকদের নিয়মিত দেখভাল করতে যেতেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁদের জন্য তিনি এক প্রতিষেধকও তৈরি করেছিলেন। সেই প্রতিষেধকের নাম দিলেন ‘পঞ্চটীকা পাঁচন’। এই ওষুধ আক্রান্তদের উপর ব্যবহার করে ফলও পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা শান্তা দেবী তাঁর বই ‘পুন্য স্মৃতি’তে এবং প্রবাসী পত্রিকায় এইসময়ে রবীন্দ্রনাথের মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। নিম,গুলঞ্চ, নিশিন্দা, তেউরি ও থানকুনির নির্দিষ্ট পরিমাণের মিশ্রনের পেস্ট এই পঞ্চটীকা পাঁচন। এর সঙ্গে সঙ্গে রুগীদের পরিচ্ছন্নতার উপর রবীন্দ্রনাথের ছিল কড়া নজর।

এ প্রসঙ্গে ১ জানুয়ারি,১৯১৯এ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ খুবই উছ্বসিত হয়ে জানান যে, সেই মুহূর্তে তিনি ২০০ রুগীর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন, যাঁরা তাঁর পঞ্চটীকা পাঁচনে আস্থা রেখেছেন।

একই সময়ে সরকারি হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা।এতে রবীন্দ্রনাথের আয়ুর্বেদের উপর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ২৫শে বৈশাখের পুণ্য লগ্নে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে দেশবাসীর একটাই প্রার্থনা হতে পারে, “মুছে যাক গ্লানি, মুছে যাক জ্বরা, অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা”।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img