হোমভ্রমণBuxa Tiger Reserve : বক্সাকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী বনমন্ত্রী, আনা হচ্ছে ২০টি...

Buxa Tiger Reserve : বক্সাকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী বনমন্ত্রী, আনা হচ্ছে ২০টি বাঘ

Buxa Tiger Reserve : বক্সাকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী বনমন্ত্রী, আনা হচ্ছে ২০টি বাঘ

হীরক কর : বক্সা টাইগার রিজার্ভকে (Buxa Tiger Reserve) উজ্জীবিত করতে নিয়ে আসা হচ্ছে কুড়িটি বাঘ। আসামের কাজিরাঙা অভয়ারণ্য (kaziranga national park) থেকে ধাপে ধাপে এই বাঘগুলিকে আনা হবে। ইতিমধ্যেই ‘ন্যাশানাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি’ বা ‘এনটিসিএ’ থেকে অনুমোদন মিলেছে। অনুমোদন মিলেছে দেরাদুনের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট থেকেও। এই প্রকল্পটির রূপরেখা তৈরি করেছে জাপানের ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি’ বা ‘জাইকা’।

সোমবার (২৬ জুলাই) সল্টলেকের অরণ্য ভবনে জাইকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বন দফতরের পদস্থ কর্তারা। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও (Jyotipriya Mallick)।

বক্সা টাইগার রিজার্ভ হলেও, সেখানে বাঘ নেই বলে এক দশক আগেই প্রশ্ন তুলেছিল দেরাদুনের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট। সেই অভিযোগ তখন নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন বক্সার তদানীন্তন ফিল্ড ডিরেক্টর রবীন্দ্রপাল সাইনি। তিনি বাঘের বিষ্ঠা দেখিয়ে প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন বক্সায় বাঘ রয়েছে। তাঁর রিপোর্টে সেই সময় সাইনি বক্সায় আটটি বাঘের কথা উল্লেখ করে ছিলেন।

এখন আসাম থেকে আনা  বাঘ  বক্সায় ছাড়া হলে বাঘের প্রজনন বাড়বে বলে বনমন্ত্রীর আশা। তাঁর দাবি, এখন বক্সা টাইগার রিজার্ভে চোদ্দটি বাঘ রয়েছে। কাজিরাঙা থেকে বাঘগুলো এলে বক্সায় চৌত্রিশটি বাঘ হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, “এখন বক্সায় দু’টি ব্ল্যাক প্যান্থার রয়েছে। কয়েক বছর আগে এক গাড়ির ড্রাইভার একটির ছবি তুলে বন দফতরকে দিয়ে ছিল।”

ভারতে ব্ল্যাক প্যান্থার (Black Panther) একমাত্র দেখা যায় কর্নাটকের কাবেরী অভয়ারণ্য, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, মহারাষ্ট্রের তাদোবা-আন্ধেরী টাইগার রিজার্ভ এবং আসামের রেন ফরেস্টে। ফলে বক্সায় ব্ল্যাক প্যান্থারের দেখা মেলায় এই টাইগার রিজার্ভ অন্য মাত্রা পেয়েছে।

বনমন্ত্রী জানান, কাজিরাঙা থেকে আনা বাঘের বিনিময়ে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকে দেওয়া হবে গন্ডার। এখন উত্তরবঙ্গে গন্ডার, বাইসন, হাতির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ১৯৮২ সালে এই জঙ্গল টাইগার রিজার্ভের স্বীকৃতি পায়। মোট ৭৬০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০০ বর্গ কিলোমিটার সংরক্ষিত। গত তিন দশকে এই জঙ্গলে বাঘের দেখা মেলেনি। তবুও বাঘসুমারি হয়। ২০১৪ সালে শেষ বাঘসুমারি হয়েছে। ‘পাগমার্ক’ মেলার সেই একই দাবি শোনা গিয়েছে বনকর্তাদের মুখে । বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে প্রথম পর্বে তিনটি বাঘ আনার জন্য বারো কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি। আসাম থেকে যে বাঘ আনা হবে, তা আগেই ঠিক করেছিল রাজ্য বন দফতর। প্রতিবেশী রাজ্য আসামের সঙ্গে ওই বিষয়ে কথাও বহু দূর এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আচমকাই করোনা থাবা বসানোয় ওই পরিকল্পনায় ছেদ পড়ে যায়। 

এনটিসিএ-র গাইড লাইন মেনে ইতিমধ্যেই বাঘেদের খাবার সুনিশ্চিত করতে বাইরের জঙ্গল থেকে এনে ছাড়া হয়েছে প্রচুর চিতল হরিণ। তাদের খাদ্যের যোগান বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। এরপর ছাড়া হবে শম্বর হরিণ। সব মিলিয়ে নতুন অতিথিদের স্বাগত জানাতে বক্সার জঙ্গল প্রায় প্রস্তুত বলে দাবি বন দফতরের।

যদিও প্রথম ধাপে একসঙ্গে ছয়টি বাঘ আনার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল এনটিসিএ। কিন্তু রাজ্যের বনকর্তারা পরীক্ষামূলক ভাবে তিনটি বাঘ এনেই পরিস্থিতি বুঝতে চাইছেন। প্রথমেই ছয়টি বাঘের ঝুঁকি বনকর্তারা  নিতে চাইছেন না। তিনটি বাঘ এনে পরিস্থিতি যাচাই করা হবে। সব ঠিক থাকলে ধাপে ধাপে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। তবে এনটিসিএ-র আরও নির্দেশ ছিল যে, ভিনরাজ্য থেকে বাঘ আনার আগে জঙ্গলের কোর এলাকা থেকে সরাতে হবে বনবস্তিগুলো। বাস্তবে তা করা এখনও সম্ভব হয়নি।

বক্সার জঙ্গলের কোর ও বাফার এলাকা মিলিয়ে রয়েছে ৩৭টি বনবস্তি। পরিবার পিছু সরকারি জমি ও দশ লক্ষ টাকা করে অনুদান পর্যন্ত দিতে চাওয়া হয়েছে। অথচ তাতে ওই বনবস্তির বাসিন্দাদের কাছ থেকে সহযোগিতা মেলেনি। যেখানে তাদোবা জাতীয় উদ্যানে বাঘ ছাড়ার আগে দুই মাসের মধ্যে ১২০টি বনবস্তি সরানো সম্ভব হয়েছিল।  বনমন্ত্রী জানান, আমরা বহু চেষ্টা করেও পারছি না। বাকিটা বুঝবেন বক্সার বনবস্তির বাসিন্দারা। কাজ সময় মতোই হবে।

২০১৮ সালের শেষে ওই বাঘ বক্সার  জঙ্গলে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রকল্পে আর আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না বনদফতর । তবে হাল ছাড়ছেন না বনকর্তারা। তাই বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে তৃণভোজীদের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বনদফতর। কেমন করে তৃণভোজীদের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাদের রক্ষণাবেক্ষণের উপায় কী, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সাত আধিকারিককে মধ্যপ্রদেশ পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে মালদার আদিনা ডিয়ার পার্ক থেকে ২১টি হরিণ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে আনা হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে প্রাকৃতিক ঘেরাটোপে ওদের রাখা হয়েছে। পরে জঙ্গলে ছাড়া হবে। এরপর দফায় দফায় দেড়শো হরিণ বক্সা জঙ্গলে ছাড়া হবে। গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকেও হরিণ আনা হতে পারে। হরিণ ব্রিডিং করা হবে রাজ্যের পাঁচটি জায়গায়। এর মধ্যে আছে, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাগদা, নদিয়ার কৃষ্ণনগর, মালদার আদিনা এবং বীরভূমের বোলপুর।

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের জন্য মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা ও বান্ধবগড় দুই জাতীয় উদ্যানে প্রশিক্ষণ হয়। সেখানেই ২০ জন আধিকারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বাঘেদের খাবার বিভিন্ন প্রজাতির হরিণের যথেষ্ট সংখ্যায় উপস্থিতি বক্সার বাঘ বনে নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই কারণে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প জুড়ে ২০০ হেক্টর জমিতে ঘাসের চাষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৭০ হেক্টর জমিতে এই ঘাসের চাষ শুরু হয়েছে। এছাড়াও রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতি বছরের মতো জঙ্গলে বনবস্তির মানুষদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

বনকর্তাদের অভিযোগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পাঠাতে অসম সরকার তেমন উৎসাহী নয়। ওই কারণে বিহার ও মধ্যপ্রদেশের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য বনদফতর ।  অসমের কাছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার চাওয়া হয়েছে। ওরা না দিলে বিহার ও মধ্যপ্রদেশের কাছে চাওয়া হবে। কারণ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে বাইরে থেকে রয়্যাল বেঙ্গল নিয়ে আসার বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।

সম্প্রতি গরুমারা জাতীয় উদ্যানে গন্ডার হত্যা, বিষমাংস দিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া চা-বাগানে পর পর চিতাবাঘ খুনের ঘটনা এখানে বাঘ বাঁচানো কতটা সম্ভব সেই  আশঙ্কাকে জোরালো করেছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের ভিতরে এখনও প্রায় ৩৭টি বসতি রয়েছে। বনবসতির মানুষেরা চায় না জঙ্গলে বাঘ থাকুক। জঙ্গলের ওপরে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের চাপ। এই পরিবেশ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পক্ষে উপযুক্ত করে তোলাটাই এখন চ্যালেঞ্জ নতুন বনমন্ত্রীর কাছে । 

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img