কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে চলেছে। এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কোভিড-১৯ নানাভাবে স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে। এর কারণে রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সঞ্চালনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রতি ২০ সেকেন্ডে একজন করে ভারতীয় স্ট্রোকের কবলে পড়ছেন এবং এই সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতি বছর ১.৫৪ মিলিয়ন ভারতীয় স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশ আক্রান্ত সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর সুযোগটুকু পর্যন্ত দেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে কোভিড-আক্রান্তদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ রোগীরই স্ট্রোকের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
সিএমআরআই হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট চিকিৎসক দীপ দাসের মতে, “যদি একজন স্ট্রোকের রোগী আক্রান্ত হওয়ার চার থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসার সুযোগ পান, তাহলে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু এই রোগীদের মধ্যে মাত্র ১-২ শতাংশ ঠিক সময়ে চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। আর কোভিড রোগীদের মধ্যে স্ট্রোকের বিপদ বাড়ার পাশাপাশি স্নায়ুজনিত সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।”
দীপ দাসের কথায়, “মস্তিষ্কের স্ট্রোক এবং হৃদরোগ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি ডেকে আনছে মৃত্যুও। এখন শুধু বয়স্করা নন, ৪০-এর কম বয়সীরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন।” তাঁর পরামর্শ, স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেই, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মুহূর্তই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার কোনও সুযোগই মেলে না।”
যদি কারোর হাত, পা, মুখে বিকৃতি, কথা জড়িয়ে আসে এবং যে কোনও ধরনের শারীরিক অস্বাভাবিকতা নজরে আসে, সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, বললেন দীপ।
জীবনযাত্রার মান বদলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ধুমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা, স্থূলত্ব ও মানসিক চাপিয়ে স্ট্রোকের বিপদ কমানো যেতে পারে। লাইফস্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্ট্রোক এবং হৃদরোগ বেড়ে চলেছে।
স্ট্রোকের লক্ষণ কীভাবে বুঝবেন?
স্ট্রোক হল শরীরের একটি স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ হঠাৎ ব্যাহত হওয়া। এটি ঘটে মুহূর্তের মধ্যে। স্ট্রোক বোঝার সহজ উপায় হল, শরীরের ভারসাম্য, চোখ, মুখ, বাহু, কথাবার্তার ওপর নজর রাখা। যদি কোনও ব্যক্তির ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা দেখা দেয়, কথা বলার সময় গলা ধরে আসে, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে, তবে সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে প্রতি বছর এক লক্ষের মধ্যে ১৪৫-১৫৪ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমেরিকায় এই সংখ্যাটা হল ১০৭ জন।
স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব?
৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর, শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিত। মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে কিনা, তা দেখা উচিত। প্রতি ৬ জনে একজন মানুষ কোনও না কোনও সময়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।