বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু ভারত আর বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশে এই সময় নতুন বছরের সূচনা হয়। বলতে গেলে এখন উৎসবের আমেজে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। তবে ১৯৬৭ সালের আগে পর্যন্ত পয়লা বৈশাখকে ঘিরে এই উন্মাদনা তেমন দেখা যেত না।
আসুন একনজরে জেনে নিই, বিশ্বের আর কোন কোন দেশে এই দিনে নববর্ষের উৎসব হয়:
নেপাল: আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপালে পয়লা বৈশাখ নববর্ষ। এদিন উৎসবে মেতে ওঠেন সেদেশের মানুষ। এ উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। খাওয়া-দাওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি চলে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা। চলে পারিবারিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানও।
মায়ানমার: আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমারেও নববর্ষকে ঘিরে উৎসব হয়। স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘থিংইয়ান’, যার অর্থ হল ‘পরিবর্তন’। মায়ানমারে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নববর্ষ উদযাপিত হয়ে আসছে। দিনটি আসলে মায়ানমারবাসীর কাছে জল উৎসবের দিন। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন জল উৎসব এটি। বৌদ্ধদের এই জল উৎসব বার্মিজ ক্যালেন্ডার মেনে চার থেকে পাঁচ দিন ধরে চলে। সেখানকার মানুষের বিশ্বাস, জলস্পর্শে সমস্ত পাপ দূরীভূত হবে। সেখানকার মানুষের বিশ্বাস, এ উৎসবের জলের ছোঁয়া লাগলে সব পাপ দূর হয়ে যাবে।
থাইল্যান্ড: থাইল্যান্ডে নববর্ষের উৎসবকে বলা হয় ‘সংক্রান’।সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি থেকেই এই সংক্রান শব্দের উৎপত্তি। এই উৎসব হয় বৌদ্ধ ক্যালেন্ডার মেনে। উৎসব উদযাপনের জন্য থাইল্যান্ডে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। হয় জল উৎসবও। তাই এবং মালয়েশিয়ান সিয়ামিজ গোত্রের মানুষ মূলত ধর্মীয় রীতি মেনে এ উৎসব পালন করেন।
শ্রীলঙ্কা: ১৩ এপ্রিল অথবা ১৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় নববর্ষ পালিত হয়। সিংহলি নববর্ষকে বলা হয় আলুথ অবুরুদ্দা। এই উৎসবের সঙ্গে তামিল নববর্ষ উৎসবের প্রচুর মিল রয়েছে। সিংহলি জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, যখন মীন রাশি থেকে মেষ রাশিতে সূর্যের গমন হয়, তখন শ্রীলঙ্কায় নতুন বছরের সূচনা হয়। নানা রকমের পিঠে, কাভুম, কুকিজ-এর মতো কেক মিষ্টি দিয়ে মিষ্টিমুখ করে দ্বীপরাষ্ট্রের বাসিন্দারা।
কম্বোডিয়া: কম্বোডিয়ার খেমর নববর্ষ। এটিও ১৪ এপ্রিল পালিত হয়। বৌদ্ধ মন্দিরে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে সেখানে খেমর উৎসব শুরু হয় কাম্বোডিয়ায়। এর পরে মন্দির চত্বরে ঐতিহ্যবাহী নাচের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। এই উপলক্ষে নানা ধরনের খেলাও হয়ে থাকে।
লাওস: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাওসে সৌরপঞ্জিকা মেনে বৈশাখের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। এর স্থানীয় নাম সংক্রান বা পি-মেই। এর অর্থ হল, নতুন সংক্রান্তি বা নতুন বছর। এই দিন ঘরবাড়ি, বৌদ্ধ মন্দির ও মূর্তি, সন্নাসীদেরয়প্রচুর জল দিয়ে স্নান করানো হয়। গুরুজন, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রতি জলার্ঘ্য নিবেদনের পর ছোটরা একে অপরের গায়ে জল ছেটায়। জলে মধ্যে মেশানো থাকে সুগন্ধযুক্ত ফুলের থেকে তৈরি করা সুগন্ধী। সেখানে ৩ দিন ধরে চলে এই উৎসব।