ড. দেবাশিস রানা
মানভূম ও পার্শ্ববর্তী রাঢ় বাংলার এক প্রাচীন ও প্রচলিত উৎসব হল, রোহিনী সংক্রান্তি। রোহিনী পার্বণ পালন করা হয় প্রতি বছর ১৩ই জ্যৈষ্ঠ। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সহ ছোটনাগপুর মালভূমির নানান জায়গায় পালিত হয় এই উৎসব। এই অঞ্চলের কৃষিকাজ সাধারণত এক ফসলি এবং তা বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। এ দিন থেকে নতুন বীজতলা তৈরির মাধ্যমে ধান চাষের সূচনা হয়।
প্রাচীন কাল থেকে চাষিদের বিশ্বাস, এই দিনের পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত ধান বীজ বপনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকে। এই সময়কালকে আঞ্চলিক ভাষায় রোহিনী বতর বলা হয়। চাষীদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই সময় বীজ বপন করলে চারা গাছ সুস্থ, সতেজ, সবল, রোগপোকামুক্ত হবে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল, এই সময় বীজ বপন করলে, তা রোপনের উপযোগী হয়ে উঠবে বর্ষার শুরুতেই। এই এলাকায় ধানচাষের জন্য বৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু এই সময় বীজ বপন করলে মাটি বাহিত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের হাত থেকে সদ্য অঙ্কুরিত চারাকে কোনো রাসায়নিক ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
এমনকি মাটির আর্দ্রতা কম থাকায় মাটির কৃমিশত্রুও বেশ কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
রোহিনী পার্বণের রীতি-নীতি:
রোহিনীর দিন সাধারণত কৃষক পরিবারের মেয়েরা ঝুড়িতে ক্ষেত থেকে মাটি এবং সেই সঙ্গে ‘সাহাড়া’ গাছের ডাল নিয়ে আসে। তা ঘরের খামার, ধানের গোলা সহ গৃহস্থের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়। এই মাটিকে জমির উর্বরতা শক্তির ধারক ও কীটনাশক বলে মনে করা হয়। সাহারা ফল বা রোহিন-ফল সন্ধ্যার সময় চাষির পরিবারের সবাই দুধের সাথে মিশিয়ে খায়। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, বর্ষার মরশুমে জলে কাদায় কাজের সময় সাপ, কীট-পতঙ্গ কামড়ালে, বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে তা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।