পুরীর জগন্নাথ ধামে রয়েছে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি। জগন্নাথ দেবকে নিয়ে ভক্তদের মধ্যে নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। প্রভু জগন্নাথ ঠুঁটো কেন? কেন তাঁর হাত নেই? এর কারণ জানেন কি?
হিন্দু দেবী-দেবতার মূর্তি পাথর কিংবা ধাতুর দিয়ে বানানো হলেও, জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি তিনটি কিন্তু কাঠ দিয়ে তৈরি। কলিঙ্গ রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তাঁর রাজ্যে ভগবান বিষ্ণুর একটি মন্দির তৈরি করতে চেয়েছিলেন। রাজার আদেশে শুরু হয় জগন্নাথ মন্দির এবং বিগ্রহ তৈরির কাজ
ব্রহ্মার পরামর্শে বিষ্ণুর কঠিন ধ্যান করে রাজা জানতে পারেন যে, পুরীর কাছের সমুদ্রে নিম গাছের গুঁড়ি ভেসে আসবে। সেই কাঠের গুঁড়ি দিয়েই বিগ্রহ তৈরি করা হবে। বিষ্ণুর কথামতো নিম গাছের গুঁড়ি এনে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হল বটে, কিন্তু কাটতে যেতেই সেই গুঁড়ি বারবার ভেঙে যেতে লাগল।
সমস্যার সমাধান করলেন স্বয়ং বিষ্ণু। বিষ্ণুর আদেশে দেবতাদের কারিগর বিশ্বকর্মা ছদ্মবেশে রাজার কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি রাজাকে বললেন, বন্ধ ঘরে তিনি মূর্তি নির্মাণ করবেন। তবে তিনি না বলা পর্যন্ত বন্ধ দরজা খোলা যাবে না। তাঁর অনুমতি ছাড়া দরজা খোলা হলে, এই মূর্তি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে তিনি বিদায় নেবেন।
এরপর মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিলেন বিশ্বকর্মা। এভাবে বেশ কিছু দিন কেটে যায়। বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে কোনও শব্দও শোনা যায় না। অধৈর্য হয়ে পড়েন রানি। বারবার রাজাকে তাগাদা দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকর্মার শর্ত ভেঙ্গে দরজা খুলে ফেলেন রাজা।
এইবার ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা জানিয়ে দেন, তাঁর দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। তাই তিনি আর মূর্তি বানাতে পারবেন না। তখনও কাঠের বিগ্রহের পদযুগল, হাত, কান, কোনও কিছুরই কাজ শেষ হয়নি। রাজার অনেক অনুরোধ অগ্রাহ্য করে মূর্তি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই স্বর্গে ফিরে যান বিশ্বকর্মা।
নিজের ভুল কাজের জন্য অনুশোচনায় ভেঙে পড়েন রাজা। এই সময় স্বয়ং বিষ্ণু এসে অসমাপ্ত মূর্তিরই মন্দির স্থাপন করে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। সেই থেকে পুরীর জগন্নাথ ধামে এই অসমাপ্ত মূর্তিরই পুজো চলে আসছে।