আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্নভঙ্গ। ২০ বছর আগের বদলা হল না। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬ উইকেটে হেরে গেল রোহিত শর্মার ভারত। শতরান করে দলকে মধুর জয় এনে দিলেন ট্রেভিস হেড। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, সব ক্ষেত্রেই ভারতকে টেক্কা দিল অস্ট্রেলিয়া। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করলেও, মাত্র
২৪০ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। মাত্র ৪৭ রান করে রোহিত ফিরে যেতেই ভারত মুখ থুবড়ে পড়ে।
রোহিত আউট হওয়ার পর বাকি ইনিংসে মাত্র চারটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছে ভারত। রোহিত নিজে তিনটি ছক্কা এবং চারটি চার মেরেছিলেন। বিরাট কোহলির মারা চারটি চারও এসেছিল রোহিত ক্রিজ়ে থাকাকালীন।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল ভারত। এরপর টানা ৯টি ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল ভারত।
পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ পর্বে হারলেও ফাইনাল তারা খেলল চ্যাম্পিয়নের মতোই। ভারতের অন্তত ৩০ রান আটকে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা।
বিরাট ৬৩ বলে করলেন ৫৪ রান আর রাহুল ১০৭ বল খেলে করলেন ৬৬ রান। ভারতের আর কেউ উল্লেখযোগ্য রান পেলেন না। গিল, শ্রেয়স ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। ২২ বলে জাদেজার করেছেন ৯ রান।
বেশি করতে পারেননি জাডেজা। ভারতের আশা ছিল সূর্যকুমার যাদবের উপর। কিন্তু ২৮ বলে ১৮ রান করে ফের ব্যর্থ হলেন সূর্য।
শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হলেন বোলাররাও। গোটা প্রতিযোগিতায় বুমরা, শামিরা যে দাপট দেখালেও, ফাইনালে দাগ কাটতে পারলেন না।
ম্যাচ যত এগিয়েছে, তত ছন্নছাড়া দেখিয়েছে রোহিতদের ফিল্ডিং। আশা জাগিয়েছিলেন শামি। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ৭ রান করে আউট হয়ে যান ওয়ার্নার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মিচেল মার্শকে তুলে নেন বুমরা। সপ্তম ওভারে স্মিথকেও আউট করেন তিনি। তার পরেই ভারতীয় বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন হেড এবং লাবুশেন।
ফাইনাল খেলতে নামার শামি ছ’ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৩টি উইকেট। কিন্তু ফাইনালে প্রথম ওভার থেকেই তাঁর লাইন, লেংথ ঘেঁটে গেল। নতুন বলে বল করছিলেন তিনি। একটি উইকেট নিলেও শামি চাপ তৈরি করতে পারছিলেন না। বুমরা কিছুটা চেষ্টা করলেও ভারতের যাবতীয় চাপ ছিল প্রথম ১০ ওভারে। বাকি তিন বোলারদের অস্ট্রেলিয়ার হেড এবং লাবুশেন সহজেই খেলে দিলেন। রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব এবং মহম্মদ সিরাজ কোনও ভাবেই চাপ তৈরি করতে পারলেন না।
ফাইনালে হারের দায় কিছুটা নিতেই হবে অধিনায়ক রোহিতকে। হাতে মাত্র ২৪০ রান নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা দেখা গেল না।
ভারতের এই হারের পিছনে বেশ কিছু কারণ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অধিনায়ক রোহিত শুরুটা ভাল করেছিলেন, যেভাবে তাড়াহুড়ো করে আউট হলেন, তা প্রত্যাশিত ছিল না। এছাড়া দল নির্বাচনে একটি বড় ভুল করেছিলেন তিনি। আমদাবাদের মন্থর উইকেটে কেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাদ রাখা হল, তা বোঝা গেল না।
শ্রেয়স আয়ার যখন ব্যাট করতে আসেন, তখন ভারতের দুই উইকেট পড়ে গিয়েছে। মাত্র ৪ রানে ফিরে গেলেন তিনিও।
লোকেশ রাহুল ৬৬ রান করলেও, তিনি খেলেছেন ১০৭ বল। মাত্র একটি চার মেরেছেন। মাঝের ওভারগুলিতে রাহুলের জন্যই রানের গতি কমে গিয়েছিল ভারতের।
ব্যর্থ হলেন সূর্যকুমার যাদবও। শেষ দিকে ভারতের ভরসা ছিলেন তিনি। কিন্তু ইনিংস টানতে পারলেন না।
মহম্মদ সিরাজ আগের সব ক’টি ম্যাচে নতুন বলে বল করেছেন। কিন্তু সেই সব ম্যাচে ভারত বড় রান করায় সিরাজ রান দিলেও ততটা সমস্যা হয়নি। কিন্তু ফাইনালে রান কম হওয়ায় সিরাজকে নতুন বল দিতে পারেননি রোহিত। বদলে শামিকে দিতে হয়। এত দিন পুরনো বলে শামি ভেলকি দেখালেও, ফাইনালে পারলেন না। সব মিলিয়ে আজকের দিনটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার, ভারতের নয়।