অজিত মুখোপাধ্যায়
এই প্রবন্ধের লেখক আকাশবাণী কলকাতার নাট্য বিভাগে ছিলেন ১৯৫৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত।তিনি পাঁচশোর বেশি নাটকের প্রযোজনা করেছেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত ছিলেন কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রর প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ পুনের। ফিল্ম এন্ড টিভি ইন্সিটিউটে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ন্যাশানাল ফ্লিম ডিভিশন ও দূরদর্শনের লিয়ঁঁআজ অফিসার ছিলেন। ওঁর লেখা …এবং শম্ভু মিত্র বইটি অসাধারন।বইটিতে আকাশবাণীর কত্ত অজানা কাহিনী হীরের টুকরোর মতো জলজল করছে। প্রবীণ এই শিল্পী কলম ধরলেন শুধুমাত্র কলকাতা নিউজ টুডে পোর্টালের জন্য।
The story behind the story of radio in kolkata is very exciting.Now almost the most important radio station in asia, AKASHVANI kolkata started from almost zero infrastructure.It has a very glorious history.Ajit Mukhopadhaya the writer of this memoir was closely associated with this station from the very beginning, he pens the history in our portal KOLKATANREWSTODAY.COM exclusively.
১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট আমরা স্বাধীন হয়েছি।তখন আমার বয়স দশ বছর। আমার মনে আছে হাজারে হাজারে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। ট্রাম বাসে কোন লিফট লাগেনি। আমি হাফ প্যান্ট পড়ে খালি পায়ে পিচগলা রাস্তায় মিছিল এর পেছন পেছন দৌড়ে ছিলাম- চিৎকার করে সবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলেছিলাম, হিন্দু মুসলমান ভাই ভাই- বন্দেমাতরম। কেন দৌড়েছিলাম? স্বাধীনতা কি? সেটা দেখতে কেমন? করে কি লাভ? সেটা দিয়ে কি হয়? এসব কিছুই জানতাম না। তারপর ৭৩ বছর পার হয়ে গেছে। এখন ভাবি এই স্বাধীনতার জন্যই কি পিচগলা রাস্তায় হেঁটে পায়ের তলায় ফোসকা ফেলেছিলাম? এর উত্তর আমার কাছে নেই, আজও আমি অনেক কিছু বুঝিন্ হয়তো বোকা, বুদ্ধি কম, তাই সেদিনের মতো আজও কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তবে এটা বুঝি, সেদিন আমাদের একমাত্র শত্রু ছিল ইংরেজ, আমরা সবাই একছাতার তলায় দাঁড়িয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। ইংরেজকে আমরা তাড়িয়েছি, কিন্তু লড়াই আমাদের থামেনি, আজ লড়াই নিজেদের মধ্যে। জানিনা এর শেষ কোথায়? আদৌ এর কোন শেষ আছে কিনা, তাও আমার জানা নেই। বিদেশী শক্তির থেকে মুক্তি পেলেও লড়াই থেকে কিন্তু মুক্তি পেলাম না।
হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন এলো, তাও বুঝতে পারছিনা, হয়তো বুকের ভেতরে অনেকদিনের কান্না জমে পাথর হয়ে গিয়েছিল, এগুলো তারই অভিব্যক্তি।
তখন আমার ৩/৪ বছর বয়স তখন মায়ের কোলে স্টিমারে চড়ে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের ফরিদপুর থেকে উত্তর কলকাতার এক বস্তি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এসেছিলাম বাবা খুঁজতে, আর বাবা এসেছিল কলকাতায় টাকা খুঁজতে। বাবাকে আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম কিন্তু বাবা টাকা খুঁজে পাননি। তাই প্রতিটি দিন ছিল আমাদের দুঃখের দিন। উত্তর কলকাতার বনেদি মানুষরা আমাদের ভালো ভাবে নেয়নি। কথায় কথায় বাঙাল বলে অবজ্ঞা আর অবহেলা করত। অনেকে আবার বলতো “বাঙাল মনুষ্য নয় উড়ে এক জন্তু”। ফুটবলের মতো লাথি খেতে খেতে অপমানে জর্জরিত হয়ে চোখের জলে একের পর এক বাড়ি পরিবর্তন করেছি। বাবার সঙ্গে সঙ্গে আমিও ছোটবেলা থেকে লড়াই করতে শিখেছি। চোখের সামনে দেখেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দুর্ভিক্ষ পীড়িত অসহায় মানুষের হাহাকার।
এমনি করেই দুঃখের নদী সাঁতরে একদিন হাজির হলাম।১ No garstin Place-এর All India Radio তে।All India Radio বলছি এই জন্য, কারণ তখনো আকাশবাণী নামটা সেরকমভাবে প্রচলিত হয়নি। অনেকেই হয়তো জানেননা। আকাশবাণী নামটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলতে গিয়ে আর একটা দিনের কথা মনে পড়ে গেল- আমার তখন পাঁচ বছর বয়স। দুপুর বেলা একা একা ঘরে বসে খেলা করছি, এমন সময় আমার জেঠতুতো দাদা, বাবাকে এসে বললো– আজ আমাদের অফিস(বেঙ্গল কেমিক্যাল) হাফ ছুটি হয়ে গেলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা গেছেন। আমি খেলতে খেলতে ভাবলাম, সরস্বতী ঠাকুর, লক্ষ্মী ঠাকুর, দুর্গা ঠাকুর, কালী ঠাকুর শুনেছি, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো শুনিনি। ঠাকুর আবার মারা যায় নাকি।
ক্রমশ..
To continue..