একাধারে তিনি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। আপামর বাঙালির কাছে তিনি কখনও “গুরুদেব”, কখনও “কবিগুরু” আবার কখনও “বিশ্বকবি”। ২৫শে বৈশাখ তাঁর জন্মদিন হলেও, গোটা মাস জুড়েই প্রিয় কবিকে নানাভাবে স্মরণ করেন মানুষ।
এবারও রাজ্যজুড়ে উদযাপিত হল রবিঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ১৬৩তম জন্মদিন। তবে একটু ভিন্নভাবে এবারের জন্মদিনে কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করল ‘আনন্দধ্বনি’। নাচে, গানে, কবিতায় বিশ্বকবিকে স্মরণ করার পাশাপাশি কেক কেটে কবির জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নিয়েছিল এই সংগঠন।
গুরুদেব বেঁচে থাকলে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে কীভাবে তাঁর জন্মদিন পালন করা হত, এই ভাবনা থেকেই ভিন্ন ধারায় রবীন্দ্র জন্মোৎসব পালনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, জানালেন আনন্দধ্বনির কর্ণধার জয়তী চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ আমাদের অন্তরে সর্বদা বিরাজ করলেও, তিনি যদি সশরীরে হাজির থাকতেন, তখন কীভাবে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করা হত, এই ভাবনা থেকেই আমরা এবার অন্যভাবে দিনটি পালনের পরিকল্পনা করি।”
জয়তী বলেন, ‘শুধু কেক কেটে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলা নয়, কবির প্রতিকৃতির সামনে কাঁসার থালায় আমরা পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে দিয়েছিলাম।”
শুধু দুই বাংলার মানুষ নন, রবীন্দ্র জন্মোৎসব আজ গোটা দুনিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
শান্তিনিকেতনে ১৯১০ সাল থেকে অর্থাৎ কবির ৪৯তম বর্ষপূর্তি থেকে তাঁর জন্মদিন পালিত হয়ে আসছে। সেসময় এর আয়োজন করেছিলেন শান্তিনিকেতন আশ্রমের ছাত্রশিক্ষকরি। সেই প্রথম কবির পরিবারের বাইরে তাঁর জন্মদিন পালন।
সেসময় কবি এক চিঠিতে লিখেছিলেন,…..”আজ মনে হল নবজন্ম লাভ করেছি। এখানে যারা আমার কাছে এসেছে, আমাকে কাছে পেয়েছে, তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার কোন সম্বন্ধ নেই – এই আমার শান্তিনিকেতন আশ্রমের জীবন – এই আমার মঙ্গললোকে নূতন জন্ম লাভ….”
১৯১১ সালে কবির পঞ্চাশ বৎসর পূর্তি উৎসব শান্তিনিকেতন আশ্রমে বেশ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। ২৪শে বৈশাখ সন্ধ্যায় ‘রাজা’ নাটক অভিনয় হয়। কবি নিজে ঠাকুরদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ২৫ বৈশাখ আম্রকুঞ্জে জন্মোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৩৫ সালে কবি ৭৫ বছরে পা দিলেন। আম্রকুঞ্জে অনুষ্ঠান শেষে উত্তরায়ণ প্রাঙ্গণে সম্পূর্ন মাটির বাড়ি “শ্যামলী-র”;গৃহপ্রবেশ হল। ঐ শ্যামলী বাড়ি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ “শেষ সপ্তক” গ্রন্থে লিখেছেন – “আমার শেষ বেলাকার ঘরখানি…বানিয়ে রেখে যাব মাটিতে
তার নাম দেব শ্যামলী।”
১৯৪১ সালে বিশ্বভারতীর ছাত্র, অধ্যাপক, আশ্রমবাসী সবাই মিলে কবির জন্মদিন পালন করেন। রবীন্দ্রনাথ তখন রোগ শয্যায়। সেদিন সন্ধ্যায় উদয়ন বাড়ির সামনে কবিকে আরাম কেদারায় বসিয়ে অনুষ্ঠান করা হল। আচার্য ক্ষিতি মোহন সেন কবির লেখা “সভ্যতার সঙ্কট” থেকে পাঠ করে শোনান। জীবিত অবস্থায় এটাই ছিল কবির শেষ জন্মদিন পালন।
২৫শে বৈশাখ কবি পারতপক্ষে আশ্রমের বাইরে থাকতে চাইতেন না। তিনি বলতেন, “অন্য কোথাও থাকিলে আমার মনে হয় আমি বৃদ্ধ। এই খানে এই সব শিশুদের মধ্যে থাকিয়া আমি যেন আমার হারানো শৈশবকে ফিরিয়া পাই।”