আধার নির্ভর লেনদেন ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতরা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব করে দিচ্ছে। এমনকি আধার বায়োমেট্রিক লক করেও এই প্রতারণা আটকানো যাচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি করে এই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। রাজ্যগুলি হল — রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ। এছাড়া দিল্লিতেও বেশ কয়েকটি জায়গায় এই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ মিলেছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গ্রাহকের অজান্তে তাঁর আধারের বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) তথ্যকে কাজে লাগাচ্ছেন সাইবার অপরাধীরা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর আগে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে চিঠি দিয়ে আধারভিত্তিক টাকা মেটানোর পরিষেবা “আধার এনেবলড পেমেন্ট সার্ভিস” বা AEPS-এর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।গ্রাহকদের কাছে সহজে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে দিতে এই পরিষেবা চালু করেছিল ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশনের (এনপিসিআই)।
অপরাধীরা মূলত গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক তথ্য ‘ক্লোন’ করছেন, যা রাজ্যের রেজিস্ট্রি ওয়েবসাইটগুলিতে আপলোড করা রয়েছে। সেই ওয়েবসাইট হ্যাক করেই চলছে তথ্যের লেনদেন। AEPS পরিষেবার গ্রাহকদের অজান্তে টাকা হাতানোর জন্য তথ্যগুলি ক্লোন করা হচ্ছে। আর সেই ক্লোন করা তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
ব্যাঙ্কে অভিযোগ জানাতে গেলেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না। মোদী সরকারের ডিজিটাল এবং নগদহীন আর্থিক পরিষেবার নিরাপত্তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক তথ্য রেজিস্ট্রি ওয়েবসাইটে আপলোড করার সময় সেগুলিকে ‘মাস্ক’ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
আধার গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক তথ্য আপাতত ‘লক’ বা বন্ধ করে রাখার পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আধারের ওয়েবসাইট ‘এমআধার’-এর মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই তথ্য লক করা যায়।
প্রথমে www.uidai.gov.in সাইটের ‘মাই আধার’ বিভাগে ‘আধার সার্ভিস’-এ ক্লিক করতে হবে। সেখানে ‘লক/আনলক বায়োমেট্রিক্স’ অপশনে ক্লিক করলে লগ-ইন করার অন্য একটি পাতা খুলে যাবে। লগ-ইন করার পর আধার নম্বর এবং আধারের সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল ফোনে আসা ওটিপি দিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য লক হয়ে যাবে।
লগ-ইন করার পর আধার নম্বর এবং আধারের সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল ফোনে আসা ওটিপি দিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য লক হয়ে যাবে।
শনিবার আধার সংক্রান্ত কারচুপি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে কলকাতা পুলিশ। উপরিউক্ত বিষয়গুলির পাশাপাশি, আধার নম্বর যাকে তাকে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এইপিএস পরিষেবা না ব্যবহার করলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করার বিষয়টিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে যত্রতত্র আঙুলের ছাপ দেওয়ার বিষয়েও গ্রাহকদের সতর্ক করেছে পুলিশ।
বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আধারকার্ডের বায়োমেট্রিক লক করা হয়। শুধু তাই নয়, অনেক জায়গায় এই বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে টাকা তোলা যায়। আর সেটাকেই হাতিয়ার করেছে জালিয়াতরা। তাঁদের পরামর্শ, গোটা দেশে একটি বিশেষ টোল ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে। নম্বরটি হল ১৯৩০। পুলিশে অভিযোগ জানানো হলে এবং সঠিকভাবে তদন্ত করলে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, নিজের বায়োমেট্রিক আগে লক রাখা জরুরি। পাশাপাশি ভুলেও কাউকে ওটিপি শেয়ার করা যাবে না।
তবে আধার লক করার পরও এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “শুধু আধার কার্ড লক করলে হবে না। কোনও হোটেলে কেউ আধার কার্ডের জেরক্স চাইলে দেবেন না। আধার কার্ডের সঠিক সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। আধার কার্ড যেখানেই দেবেন মাস্ক করে দেবেন। যেখানে শুধুমাত্র চারটে নম্বর পাওয়া যাবে। আর ছবিও ব্লার করা থাকবে।”