হোমPlot1কলকাতার একমাত্র 'রেডিওম্যান'কে চেনেন?

কলকাতার একমাত্র ‘রেডিওম্যান’কে চেনেন?

কলকাতার একমাত্র ‘রেডিওম্যান’কে চেনেন?

কারও কাছে তিনি ‘রেডিওম্যান’ (Radio Man), কারও কাছে ‘রেডিও কাকু’ (Radio Kaku)। অমিতরঞ্জন কর্মকার (Amit ranjan Karmakar), অর্ধশতাব্দী ধরে কুমোরটুলিতে যিনি একাই বিলুপ্তপ্রায় রেডিও নামক যন্ত্রটিকে অসীম মমতায়, যত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

কুমোরটুলির (Kumartuli) বনমালি সরকার স্ট্রিটে ষাটের দশকে (১৯৬৭) অমিতবাবুর বাবা শান্তিরঞ্জনের হাত ধরে রেডিও মেরামতের দোকানের যাত্রা হয়েছিল। প্রতিমা শিল্পী রাখাল পালের ষ্টুডিও ফেলে বাঁ দিকে মৃৎশিল্পী সমন্বয় কমিটির অফিসের পাশের সেই দোকানটি আজও রয়েছে।

১৯৭৬ থেকে তিনি পাকাপাকিভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ১৫০টির বেশি অমূল্য রেডিও। বুশ, ফিলিপস থেকে মারফি – কী নেই তাঁর সংগ্রহে!

রেডিও-র সেই অতীত গরিমা এখন অস্তমিত। তবে অমিতবাবুর মতে, ঐতিহ্য রক্ষা বা নস্টালজিয়া, যে কারণেই হোক, কয়েক বছর আগেও রেডিওকে যেভাবে তাচ্ছিল্য করা হত, এখন আর তেমন হয় না। তবে দুই-তিন দশক আগের মতো না হলেও, এখন রেডিওর কদর আবার বাড়ছে। অমিত জানালেন, একসময় দোকানে অনেক কর্মচারি ছিলেন। নয়ের দশক পর্যন্ত ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভ হত প্রচুর ৷ তারপর থেকেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দিতে শুরু করে।

তবে ২০১০ থেকে একটু একটু করে হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা ৷ এফএম-এর সৌজন্যে এখন মানুষ আবার রেডিও শুনছেন ৷

সারা বছর টুকটাক কাজ থাকে। তবে, মহালয়ার (Mahalaya) সময় এক মাস আগে থেকে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এসময় শুধু কলকাতা নয়,  দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই তাঁর কাছে রেডিও সারাইয়ের জন্য ছুটে আসেন।

যে সব বাড়িতে সারা বছর রেডিয়ো চলে না, সেইসব বাড়ির লোকেরাও মহালয়ার ঠিক আগে গুটি গুটি পায়ে অমিতের দোকানে হাজির হন৷ তাঁদের হাতে থাকে রকমারি সব রেডিও। কোনটি  সস্তা প্লাস্টিকের, আবার কোনটি কেউ বা বার্ধক্যের ভারে জীর্ণ। তবে কাউকেই ফেরান না অমিত।

অমিতবাবু জোর দিয়ে বলছিলেন, “আমি হলফ করে বলতে পারি, যে ছেলেটি বা মেয়েটি কখনই রেডিও শোনে না, মহালয়ার দিন তাঁরাও রেডিওর কথা মনে করে।”

এখনও সকালে রেডিও চালিয়ে নিয়মিত খবর শোনেন অমিতবাবু। অতীতে কারা কারা খবর পড়তেন, আর এখন কারা কারা খবর পড়েন,  গড়গড় করে বলে দিতে পারেন তাঁদের নাম।

এভাবে আর কতদিন? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই অমিতরঞ্জনের। প্রশ্ন শুনে শুধুই হাসেন,আর বলেন, “যুগের পরিবর্তন মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে যতদিন বাঁচবো, ততদিন প্রতি বছর মহালয়ায় রেডিও বাজিয়ে কুমোরটুলির ঘুম ভাঙাবোই। এর কোনও পরিবর্তন হবে না।”

(১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৈরি হয়েছিল ইউনাইটেড নেশনস রেডিও। ২০১৩ সালে আজকের দিনেই রাষ্ট্রসঙ্ঘ দিনটিকে রেডিও ডে বা বেতার দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। লাতিন শব্দ রেডিয়াস থেকে রেডিও শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ আলোর কিরণ।)

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img