হোমরাজ্যকোভিডে প্রয়াত সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কোভিডে প্রয়াত সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কোভিডে প্রয়াত সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কোভিড কেড়ে নিল আরও এক সাংবাদিকের প্রাণ। এবার চলে গেলেন জি ২৪ ঘণ্টার এডিটর অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৪ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু জ্বর না কমায় আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে প্রথমে ভেন্টিলেশন, পরে একমো সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

৩৩ বছর ধরে বাংলা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অঞ্জন। রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই অঞ্জন প্রেসিডেন্সির কৃতী ছাত্র। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন।

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। কলকাতা, দিল্লি সহ দেশের একাধিক রাজ্যে কাজ করেছেন। এরপর যোগ দেন ই-টিভি বাংলায়। দীর্ঘদিন কাজ ক‍রেছেন আকাশ বাংলা চ্যানেলেও। ২০০৬-এ তিনি ইনপুট এডিটর হিসেবে যোগ দেন ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলে। ২০১৫ পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। তারপর আনন্দবাজার ডিজিটাল হয়ে ভোটের মুখে তিনি জি ২৪ ঘণ্টার এডিটর হিসেবে ফিরে আসেন। কিছুদিনের জন্য টিভি নাইন চ্যানেলের এডিটরের দায়িত্বও পালন করেছেন।।

২৪ ঘণ্টার আপনার রায় অনুষ্ঠানকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন অঞ্জন। বলতে গেলে বাংলায় টেলিভিশন সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা এনেছিলেন তিনি। পেশাগত ক্ষেত্রে খবরের সঙ্গে কখনও আপস করেননি। সহকর্মীদের সঙ্গে মিশে যেতেন অনায়াসে।

সাংবাদিক তরুণ গোস্বামীর স্মৃতিচারণা : কয়েকদিন ধরেই শুনছিলাম অঞ্জন, আমাদের অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যাযের শরীর খারপ থেকে খারাপতর হচ্চে। যখন খবরটা পেলাম চোখের জল বাঁধ মানলো না। প্রেসিডেন্সি কলেজে অঞ্জন আমার থেকে দু বছরের জুনিয়র, আর আলাপন দা দু বছরের সিনিয়র। কলেজের main বিল্ডিং এর তেতালাতে ছিল দর্শন বিভাগ আর তার পাশেই বাংলা, যে বিভাগে অঞ্জন পড়ত।
প্রেসিডেন্সি আর্টস বিল্ডিংয়ে আমাদের সময় ছেলেদের সংখ্যা হাতে গোনা যেত। আমাদের batch এ ইতিহাসে তিনজন ছাত্র, বাংলাতে তিনজন, ইংরেজিতে একজন আর আমরা দর্শন বিভাগে চার জন। নতুন কোনও ছেলে এলেই তার সঙ্গে পরিচয় হতো।
আমি যেহেতু আড্ডা মারতে ভালোবাসি, তাই অতি অল্পদিনেই অঞ্জনের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। রোগা, ছিপছিপে চেহারা, মুখে দুষ্টু মিষ্টি হাসি আর উজ্জ্বল চোখ দুটো। কত গল্প হতো। প্রেসিডেন্সি কলেজের বারান্দা থেকে বৃষ্টি দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞাতা। অঞ্জন আর আমি বহুবার এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। মান্না দে, হেমন্ত মুখার্জির গান বর্ষার জল দেখতে দেখতে শিষে বাজিয়েছি।
তখন আমরা কেউই জানতাম না সাংবাদিকতাতে আসবো। দুরন্ত ছাত্র ছিল। বাংলা বলা এবং লেখা দুটোতেই ছিল পারদর্শী। একই সাথে আনন্দবাজার গোষ্ঠীর কাগজে কাজ করেছি। ও বাংলাতে যখন রিপোর্ট লিখতো, তখনই সেই কম বয়সেই লেখার মুন্সিয়ানা আর বিশ্লেষণ পড়ে ভাল লাগতো। ও টেলিভিশনে লে যায় আর অতি কম বয়সেই কাজের সুনাম অর্জন করে।
দেখা সাক্ষাৎ ইদানিং হতো না। কিন্তু যখনই দেখা হয়েছে নিজে এসে কথা বলেছে। তুই খুব ভালো কাজ করছিস, বললেই বলত ছাড় তো, দেখতাম বেশ লজ্জা পাচ্ছে।
আমার কাছে ছোট ভাইয়ের মতোই ছিল। আজ সব ইতিহাস। আমার কাছে সেই কলেজের ছবিটাই যেন চিরদিন স্মৃতিতে থাকে। এই মুহূর্তে আলাপনদার মনের অবস্থা অনুমান করতে পারি। স্বামীজী শক্তি দিন এই প্রার্থনা করি।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img