হোমPlot1বাংলাদেশের যে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু অলৌকিক কাহিনী

বাংলাদেশের যে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু অলৌকিক কাহিনী

বাংলাদেশের যে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু অলৌকিক কাহিনী

সংগ্রাম দত্ত
বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও-এর পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী।

পাচঁগাঁওয়ে সঞ্জয় দাসের বাড়ির মন্ডপে দুর্গাদেবী লাল বর্ণে হয়ে পূজিতা হন। প্রতি বছর ভক্তদের ঢল নামে এ মন্ডপে। দেশবিদেশ থেকে বহু মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

কেন পাঁচগাঁওয়ের পুজোর এত খ্যাতি? কথিত আছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে সাধক সর্বানন্দ দাশ (সঞ্জয় দাসের পূর্ব পুরুষ) তৎকালীন সরকারের মুন্সি পদবিপ্রাপ্ত কর্মস্থল আসামের শিবসাগর জেলার বাড়িতে দুর্গাপুজার সময় তাঁর স্ত্রী ও কর্মচারীদেরকে নিয়ে কামাখ্যাধামে কুমারী পুজো করার মনস্থ করেন। মন্দিরের সেবায়েতের সহায়তায় সর্বানন্দ দাস পঞ্চম বর্ষীয়া কুমারী নির্বাচন করেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা পুজো করার পর প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন। কুমারীর গায়ের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছে।

এই দৃশ্য দেখার পর সর্বানন্দ মাকে জিজ্ঞাসা করেন, “মা আমার পুজোয় সুপ্রসন্ন হয়েছ কি?” উত্তরে ভগবতী বলেন, হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাচঁগাঁও-এর পূজা মন্ডপে আবির্ভূত হয়েছিলাম। এখন থেকে ভগবতীকে লালবর্ণে পূজা করবে। তখন সর্বানন্দ মাকে আবারও প্রশ্ন করলেন, তুমি যে এই রূপে আমার বাড়িতে আবির্ভূত হয়েছিলে তার প্রমাণ কী?

উত্তরে কুমারী দেবী বলেন, তোর দুর্গা মন্ডপের বেড়ার উপর হাতের ছাপ রেখে এসেছি। তোর পূজায় আমি খুবই সন্তুষ্ট হয়েছি, তুই আমার কাছে বর প্রার্থনা কর।

তখন সর্বানন্দ দাস বলেন, মা তুমি যদি একান্তই বর দিতে চাও, তবে আমি এই বরই প্রার্থনা করি যে, আমার স্থাপিত পাঁচগাঁও-এর দুর্গা মন্ডপে তুমি স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিতা থাকবে।

ভগবতী তাঁর নিজের মাথায় পরিহিত সোনার সিঁথি খুলে সর্বানন্দের হাতে দেন এবং প্রতি বছর মহাস্নানের সময় এই সিঁথি দিয়ে স্নান করার নির্দেশ দেন। মাকে প্রণাম করে বাড়িতে আসার পর অনুসন্ধান করে দেখেন যে, সত্যই বেড়ার উপর দেবীর হাতের ছাপ রয়েছে।

পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে পূজার আয়োজন করেন। কামাখ্যাধামে দেবীর আদেশ অনুযায়ী, মার্তৃমূর্তিকে কুমারী গায়ের সেই লাল বর্ণের সহিত সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন।

লাল বর্ণ দেওয়ায় গ্রামবাসী সর্বানন্দের জ্ঞাতিবর্গ, গুরু, পুরোহিত, কেউই পূজায় যোগদান করবেন না বলে জানিয়ে দেন। সেই বছর ষষ্ঠীর দিন রাত পর্যন্ত কেউ আসেননি। পুরোহিতের অভাবে দেবীর বোধন সম্পন্ন হলো না। সর্বানন্দ পাগলের মতো মা দুর্গাকে ডাকতে লাগলেন। রাত্রি শেষ প্রায়, এমন সময় এক অলৌকিক কান্ড ঘটে গেল। গুরু, পুরোহিত, জ্ঞাতিবর্গ ও গ্রামবাসী সকলে এসে জানালেন, তাঁরা স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন যে, ভগবতী  লাল বর্ণে পূজিত হবেন। এবং তা সর্বানন্দ দাসের পাঁচগাঁওয়ের বাড়িতেই। বর্তমানে সর্বানন্দ দাসের পরবর্তী বংশধর সঞ্জয় দাসের সার্বিক তত্বাবধানে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img