হোমPlot1Madhyamgram: বেহালার দুর্ঘটনায় শঙ্কিত মধ্যমগ্রামবাসী, বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন

Madhyamgram: বেহালার দুর্ঘটনায় শঙ্কিত মধ্যমগ্রামবাসী, বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন

Madhyamgram: বেহালার দুর্ঘটনায় শঙ্কিত মধ্যমগ্রামবাসী, বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন

শুক্রবার সকালের এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় বেহালায় সৌরনীল সরকার নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা রাজ্য তোলপাড় হচ্ছে। সাত সকালে বেপরোয়া লরি যেভাবে বড়িষা হাইস্কুলের ছাত্র সৌরনীলকে পিষে দিয়েছে, তাতে শিউরে উঠছেন অভিভাবকরা। আজকের এই দুর্ঘটনা রাজ্যের যানশাসন নিয়ে পুলিশের ভূমিকাকে ফের প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। কলকাতা পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির মধ্যেই এই ঘটনা কী করে ঘটে, তা  মুখ্যসচিবের কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি।

প্রশাসনিক স্তরে যা’ই ব্যবস্থা নেওয়া হোক না কেন, সৌরনীলের এই মৃত্যু উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম এলাকার সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত করে তুলেছে। প্রতিনিয়ত বেপরোয়া যানবাহনের দাপাদাপি আর পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এ নিয়ে স্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপগুলিতে সরব হয়েছেন তাঁরা।

অর্পিতা রায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা উদ্বেগপ্রকাশ করে তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “আজকে বেহালার অ্যাক্সিডেন্টের ঘটনা দেখে শিউরে উঠলাম। তারপর মনে হল এরকম  ঘটনা তো মধ্যমগ্রামের আরতি সিনেমা হলের দিকে ব্রিজ থেকে নামার মুখে যে কোনো সময় হতে পারে!!  আগে ব্রিজ থেকে নামার মুখে স্পিড ব্রেকার ছিল, গাড়ির গতিবেগ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত। রাস্তা চওড়া হওয়ার পর সেই স্পিড ব্রেকার উধাও। ট্রাফিক কন্ট্রোল করার কেউ নেই। বড় ছোট গাড়ি, অটো, বাইক সব চলছে দুর্দাম গতিতে। সবার প্রচুর তাড়া, সে অটো হোক বা টোটো বা বাইক।”

অর্পিতাদেবী আরও লিখেছেন, “ব্রিজের আরেক পাশে সিভিক ট্রাফিক আছে । সেখানে সার্জেন্টরাও থাকেন। ধরে নিলাম, ব্রিজের ওপারের মানুষজনের নিরাপত্তা বেশি দরকার। কিন্তু এপারের  মানুষদের জীবনের দাম নেই!! এর সাথে যোগ হয়েছে ফুটপাথ বানানোর কাজ। যার ফলে বালি, স্টোনচিপ, সিলিন্ডারের গাড়ি সব রাস্তার উপরে স্থান পেয়েছে। মালবহনকারী গাড়ি রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে। রাস্তা পারাপার করতে গেলে ভয় লাগে। স্কুল বাস দাঁড়ানোর উপায় নেই ঠিক মতো। বাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হওয়া রীতিমতো ভয়ানক হয়ে উঠছে। কারোর কোনো হেলদোল নেই।”

অর্পিতাদেবীর এই পোস্ট নিয়ে স্থানীয় অনেক বাসিন্দাই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ দ্রুত স্পিড-ব্রেকার বসানোর দাবি তুলেছেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সব্যসাচী গাঙ্গুলি লিখেছেন, “ব্রিজের দুদিকটাই ভয়ানক বিপজ্জনক, মারাত্মক বেগে সবরকম গাড়ি চলে এবং সবারই সাংঘাতিক তাড়া! অ্যাক্সিডেন্ট ঘটছেও, কিন্তু মানুষ নিরুত্তাপ!!! দু পাশেই আগের মতন স্পিড ব্রেকার দরকার, না হলে আরও বিপদ বাড়বে!!”

সব্যসাচীবাবু আরও লিখেছেন, “মানুষ এখানে হেব্বী সচেতন, তাই এখন এক নয়, রোজ দুবেলাই বসুনগর মাছের বাজারের সামনেটায়, রসরাজের সামনে রমরমা ভিড় আর তার সাথে সামনেই রাস্তা জুড়ে চার চাকা, দুচাকা তিনচাকার বিস্তৃত পার্কিং!! লোকে মরুক চলতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে, কি আর আসে যায়!!”

বছর কয়েক আগে উৎসবের মরসুমে উড়ালপুলের মুখে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক তরুণী নার্স। তারপর তড়িঘড়ি স্পিড-ব্রেকার বসানো হয়েছিল। সেইসঙ্গে যান নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশও। কিন্তু এখন পুলিশের দায়িত্ববোধও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উড়ালপুলের মুখে একাধিক পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকলেও, তাঁরা প্রায় বেশিরভাগ সময় রাস্তার ধারে চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে গল্পে মশগুল থাকেন। কেউ কেউ সারাক্ষণ মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করেই সময় কাটান। আর গাড়ি সামলাতে দেখা যায়, একজন বা দুজন সিভিক পুলিশকে। তাই ব্রিজের এপারে পুলিশ থাকলেও, যানশাসনে তাঁদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আশেপাশের বাসিন্দারা।

এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে মধ্যমগ্রামে ফুটপাত বলে কোনও বস্তু ছিল না। গোটা রাস্তায় চলে গিয়েছিল জবরদখলকারীদের দখলে।  সম্প্রতি পুরসভার উদ্যোগে সোদপুর রোডে ফুটপাত তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ফুটপাত তৈরির পর তা কি সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারবেন, নাকি তা আবার চলে যাবে অবৈধ দখলদারদের হাতে, এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

তবে মধ্যমগ্রামবাসীকে ফুটপাত ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পুরপ্রধান নিমাই ঘোষ। তিনি সাফ জানিয়েছেন, রাস্তাকে জবরদখলমুক্ত করে ফুটপাতকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হবে।

চৌমাথা থেকে বাদু রোডের বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তা থেকে জবরদখল হটিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে পৌরসভা। এবার পুরসভার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, মধ্যমগ্রাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সোদপুর রোডকে জবরদখলমুক্ত করা। পুরসভা পারবে কি?

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img