দেবদাস কুণ্ডু
কতো লেখক কতো শিল্পী
এঁকেছেন মানুষের ছবি
গঙ্গা অজুর্ন বিবর
আমি দেখেছি মানুষ সুন্দর।
ইলেকট্রিক বিলে অ্যাড্রেস চেঞ্জ হবে না।
কেন? ইলেকট্রিক বিল কি প্রমাণ করে না আমি এই ঠিকানায় থাকি?
আমি আপনার এতো কথার জবাব দিতে পারবো না।
কে জবাব দেবে?
অফিসারের কাছে চলে যান।
অফিসার বললেন, সিইএসসি ঝুপড়িতে ইলেকট্রিক লাইন দেয়। তা বলে আমরা কি ঝুপড়িতে রেশন কার্ড দেবো?
বড সমস্যায় পড়া গেল। নতুন গ্যাসের কানেকশন এসে ফিরে যাবে? তিন বছর আগে অ্যাপ্লাই করেছি। বাবা মা ভাই বোন সব কোয়ার্টারে থাকে। ওখানকার ঠিকানায় আমার, আমার স্ত্রী আর মেয়ের রেশন কার্ড রয়েছে। আমি থাকি মুরারী পুকুরে বাবার কেনা বাড়ির একটা ঘরে। রুমা স্টোভে রান্না করে। দেরি হয় ওর কাজে যেতে। গ্যাস খুব দরকার। কিন্তু এই বাড়ির ঠিকানায় দেবে না গ্যাসের কানেকশন। কোয়ার্টারের ঠিকানায় দেবে। সেখান থেকে প্রতি মাসে সিলিন্ডার টেনে আনা সম্ভব নয়।
এখন কি করি? একটা সিগারেট ধরিয়ে রেশন বাডিটার দিকে তাকালাম। বহু পুরনো বাড়ি। পলেস্তরা খসে গেছে। রং উঠে জীর্ণ। দেওয়ালে অশ্বত্থ গাছ। ভিতর অন্ধকার। আলো জ্বলছে টিম টিম করে। সিঁড়িত বসে আছেন একজন লোক। তিনি বললেন, কি কাজ আপনার বলুন। আমি করে দিচ্ছি।
বললাম ঘটনাটা।
তিনশো টাকা লাগবে। হয়ে যাবে। কাল পেয়ে যাবেন।
তিনশো কেন?
তিনটে কার্ড যে।
বুঝলাম।
রাস্তায় চলে এলাম। অদূরে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়। নেতাজি ঘোড়ায় চড়ে ছুটছেন। এই মানুষটাই বলেছিলেন না, দেশ স্বাধীন হবার পর দশ বছর মিলিটারি শাসন দরকার। কেন বলেছিলেন, এখন বুঝতে পারছি। হঠাৎ মাথায় একটা নাম চলে এলো। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আবার অফিসারের ঘরে। বললাম, এই নম্বরে একটা ফোন করুন তো।
আমি কারো সঙ্গে কথা বলি না। আপনাকে তো বললাম, হবে না। বাইরে লোক বসে আছে তাদের কাছে যান।
আপনি ফোনটা একটু করুন না। দেখুন না, কে কথা বলছেন।
বিরক্তি নিয়ে ফোন করলেন অফিসার। তাড়াং করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, হ্যাঁ স্যার এখনই করে দিচ্ছি। ভুল হয়ে গেছে স্যার।
ফোনটা নামিয়ে চিৎকার করে ডাক দিলেন, রতন।
রতন চলে এল। অফিসার বললেন, এনার কাজটা আজই করে বিকেলে দিয়ে দাও।
কিন্তু স্যার অনেক ফাইল পড়ে আছে যে?
ও সব পড়ে করবে। আগে যেটা বলছি সেটা করো। না হলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।
বলেন কি স্যার!
তুমি এখন যাও।
রতন অদ্ভূত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল।
অফিসার বললেন. আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন। আগে বলতে হয় তো যে ফুড ইন্সপেক্টর বারীন বেরা আপনার লোক।
কেন বলবো? যাদের বারীন বেরা নেই তাদের টাকা দিয়ে কাজ করতে হবে। তাই তো?
ছি! ছি! আপনি যে কি বলেন? আপনি চা না কফি খাবেন?
কোনটা নয়। গরিব মানুষ কোথা থেকে টাকা দেবে?
আর বলেন কেন? অফিসের স্টাফগুলো হয়েছে এক একটা শয়তান।
ওরা শয়তান। আপনি মহাশয়তান।
এমন করে বলবেন না স্যার।
স্যার! তাহলে বলবো আপনি একটা মহা ঘুষখোর।
ছি! ছি! আপনাদের সেবা করাই তো আমার কাজ।
বুঝতে পেরেছি আপনার কাছে ঘুষ নেওয়াটা সেবা। তাই তো?
হি… হি…
ওমন করে হাসবেন না
কেন স্যার?
আপনাকে একটা মস্ত বড় রাক্ষস লাগছে।