এসপ্ল্যানেড চত্বরের নাম বদলে ধর্মতলা করার দাবি উঠেছে। সেইসঙ্গে মেয়ো রোডের নাম পরিবর্তন করে ধর্মরাজ সরণি এবং লেনিন সরণির নাম ধর্মতলা সরণি করার দাবি উঠেছে। এসপ্ল্যানেডের মেট্রো স্টেশনের নামও ধর্মতলা
করার দাবি উঠেছে।
ধর্মতলা নামের সঙ্গে ধর্মের কি আদৌ কোনও যোগসূত্র রয়েছে? এ নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। ইংরেজ সাহেব রেভারেন্ড জেমস লং-এর মতে, ধর্মতলায় এখন যেখানে টিপু সুলতান মসজিদ, একসময় সেখানে তার পাশে একটি ঘোড়ার আস্তাবল ছিল। সেই আস্তাবলের জমিতে আরেকটা মসজিদও তৈরি হয়েছিল। সেই মসজিদ বা আস্তাবল কোনোটারই এখন অস্বিত্ব নেই। যদিও একসময় ওই চত্বরে একটা ধর্মীয় আবহ তৈরি হয়েছিল, যার জেরে ওই এলাকার নামকরণ হয়েছিল ধর্মতলা।
অন্যদিকে, ডাঃ হর্নেল সাহেবের মতে, জানবাজার এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটা বসতি ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানও করতেন বৌদ্ধরা। সেখান থেকেই ধর্মতলা নাম হয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেন, ওই এলাকায় মেম্বা পীরের বাজারও ছিল। পরবর্তীকালে হগ সাহেবের বাজার (বর্তমানের নিউ মার্কেট) চালু হলে, ওই বাজারের গুরুত্ব কমে যায়।
অন্য আরও একটি মত লোকমুখে চালু রয়েছে। কারো কারো মতে, ধর্মতলা নামের সঙ্গে আদি গ্রামবাংলার বিশেষত রাঢ় অঞ্চলের উপাস্য দেবতা ধর্মঠাকুরের যোগ রয়েছে। সিঁদুর মাখানো একটা এবড়োখেবড়ো পাথরের টুকরোয় এই দেবতার পুজো করা হয়। বাউড়ি, বাগদি, হাড়ি, ডোম জাতির মানুষেরাই বেশি এই দেবতার পুজো করে থাকেন।
আবার কেউ কেউ বলেন, জানবাজার এলাকায় একসময় এই সব জাতের মানুষদের বসবাস ছিল। একসময় সেখানে ধুমধাম করে ধর্মঠাকুরের পুজো হত, গাজন হত, মেলা বসত।
অর্থাৎ কোনও এক সময়ে এই এলাকায় উৎসবের বাতাবরণ ছিল। আর সূত্রেই এখানকার নাম ধর্মতলা হয়ে গিয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
অন্যদিকে, ওই চত্বরের একদিকে ছিল ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ, অন্যদিকে ছিল জনবসতি। সাধরণত, দুর্গ আর শহরের মাঝখানের অঞ্চলকে ইংরেজিতে এসপ্ল্যানেড বলা হয়ে থাকে। সেই কারণেই ইংরেজরা ওই এলাকার নাম এসপ্ল্যানেড হয়েছিল বলে মনে করা হয়।