হোমPlot1২৩ পল্লীর পুজোয় দেবী দুর্গার নিত্য আরাধনা

২৩ পল্লীর পুজোয় দেবী দুর্গার নিত্য আরাধনা

২৩ পল্লীর পুজোয় দেবী দুর্গার নিত্য আরাধনা

শুভদীপ রায় চৌধুরী
সারা বছর এই চারটি দিনের অপেক্ষা বাঙালিরা করলেও, বাংলার বহু প্রান্তে উমা ৩৬৫ দিন অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবীদুর্গা বছরে দুইবার আসেন মর্ত্যে। একবার শরৎ কালে এবং একবার বসন্ত কালে। তবে শারদীয়া দুর্গাপুজোতেই উৎসবে মেতে ওঠেন বাঙালিরা। শহর কলকাতায় একসময়  কয়েকটি পারিবারিক পুজো অনুষ্ঠিত হত।সময়ের স্রোতে পারিবারিক গণ্ডী ছাড়িয়ে এই উৎসব ছড়িয়ে পড়ে সর্বসাধারণের মধ্যে। তাই আজ বারোয়ােরি পুজোরই বেশি রমরমা। তবে আদি শক্তিকে উপলব্ধি করতে হলে, চাই নিত্য আরাধনা। আর এই ধারণাই সার্থক রূপ পেয়েছে দক্ষিণ কলকাতার ২৩ পল্লী দুর্গা মন্দিরে।

দেবী এখানে অষ্টধাতুর বিগ্রহেই  সারা বছর পূজিত হন। তবে এই স্থায়ী মূর্তি তৈরির পেছনে রয়েছেও রয়েছে কয়েকটি ঘটনা। ১৯৩৯ সালে সর্বজনীন পুজো শুরু হলেও, ১৯৭১ সাল থেকে চাঁদা তুলে পুজো বন্ধ করে দেন উদ্যোক্তারা এবং নিজেরাই বহন করতে থাকেন পূজার ব্যয়ভার। কিন্তু কেবলমাত্র চারদিন নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষকে নিত্য শক্তির উপাসনায় উৎসাহিত করতেই ২৩ পল্লীর উদ্যোক্তারা এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা মৃন্ময়ীকে ধরাধামে ধরে রাখার জন্যই স্থায়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, শুরু হয় নিত্য দুর্গাপুজো।

এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ১৯৮৫ সালে সম্পূর্ণ হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। এরপর ১৯৮৬ সালে ১৪ ফুটের অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তির প্রতিষ্ঠা হয় এবং গড়ে ওঠে দেবালয়। পূজার আগে জগৎগুরু শঙ্করাচার্য মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন। বেনারসের ধাতুশিল্পী শিউনাথ বিশ্বকর্মা এই মূর্তির রূপদান করেছেন এবং মূর্তির পরিকল্পনা করেছেন প্রবোধরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এবং কুমোরটুলির বিশিষ্ট শিল্পী জিতেন পাল। মূর্তির শৈলীতে প্রাচ্য শিল্পরীতিরই ছাপ স্পষ্ট।

দেবীর গায়ের রঙ স্বর্ণবর্ণা, মাথায় অর্ধচন্দ্র,  বাঘছাল পরিহিতা, তিনি হিমালয় কন্যা রূপেই এই মন্দিরে বিরাজিতা। বৃহৎনান্দিকেশ্বর পুরাণ মতে, পুজো হলেও এখানে চক্ষুদান, প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না। পঞ্চমীতে বোধন, চণ্ডীপাঠ, সপ্তমীতে মহাস্নান, মহাষ্টমীতে নবঘট স্থাপন এবং চৌষট্টি যোগিনীর পুজো অনুষ্ঠিত হয়। সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ায় নৈবেদ্য এবং ভোগে কোনও আমিষ ভোগ দেওয়া হয় না। দশমীতে দেওয়া হয় টকদই, খই ও চিড়ে। নবঘট ও নবপত্রিকা বিসর্জন দিয়েই সমাপ্তি ঘটে শারদীয়া দুর্গাপুজোর।

সনাতন হিন্দু ধর্ম, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার এক মূর্ত প্রতীক এই দুর্গাপুজো। কিন্তু আজকের বারোয়ারি পুজোয় নেই ধর্মাভাব, নেই একতা, শুধু রয়েছে আড়ম্বরের আস্ফালন। কিন্তু সমাজের এই ভয়ঙ্কর ভাঙনকে রুখতে মাতৃপূজাই হতে পারে একমাত্র পথ। আর দক্ষিণ কলকাতার ২৩ পল্লীর মন্দিরে এই চিরস্থায়ী দেবীমূর্তি তারই পথিকৃৎ।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img