নবজাতক সন্তানকে জন্মগত শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা থেকে রক্ষা করতে গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, সন্তানধারণের পরিকল্পনার সময় থেকেই হবু মায়েদের নিয়ম করে দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড ওষুধ খাওয়া আবশ্যিক করা উচিত।
ফলিক অ্যাসিড সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিশিষ্ট স্নায়ু শল্য চিকিৎসক সন্দীপ চ্যাটার্জি বলেন, শিশুর মেরুদণ্ডের গঠন এবং কিডনির সুরক্ষায় ফলিক অ্যাসিডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
শিশু শল্য চিকিৎসক শুভাশিস সাহা বলেন, ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতির কারণে ভারতে প্রতি হাজারে ৪ থেকে ১০টি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।
দুই চিকিৎসকের কথায়, সন্তান গর্ভে আসার আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করলে জন্মের সময় শারীরিক ত্রুটির ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাঁরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফলিক অ্যাসিডের অভাবে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার, স্পাইনা বাইফিডা, নার্ভের সমস্যা সহ নানা জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি থেকে যায়।
সেইসঙ্গে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবারের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে রয়েছে, মুসুর ডাল, কড়াইশুঁটি, মটর, সয়াবিন প্রভৃতি। সবচেয়ে বেশি ফলিক অ্যাসিড রয়েছে মুসুর ডালে। পালং শাক, কলমি শাক , সরষে শাক, নটে শাক, ছোলা শাকের মত সবুজ শাকেও ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি-৯ থাকে।
কলা, লেবু সহ ফলিক অ্যাসিড যুক্ত অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিডের ওষুধ খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দুই চিকিৎসকের মতে, গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশ শুরু হলে, ফলিক অ্যাসিড নিউরাল টিউব গঠনে সহায়তা করে। ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের কিছু বড় জন্মগত ত্রুটি থেকে শিশুকে রক্ষা করে।
ফলিক অ্যাসিড সম্পর্কে কিছু তথ্য:
গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে একটি হল, ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি-৯ অথবা ফোলেট। ফলিক অ্যাসিড হচ্ছে, ভিটামিন বি-৯এর দ্রবণীয় রূপ। এটি মানুষের শরীরে ভিটামিন বি-১২এর মতো তৈরি হয়ে থাকে।
ফলিক অ্যাসিড ডিএনএ গঠন বা সিন্থেসাইজেশন, কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ মেরামত করতে সাহায্য করে। আর ক্রমাগত কোষ বিভাজনে এবং কোষের বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। ফলিক অ্যাসিডের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হতে পারে। তাই এই অ্যাসিড কমে গেলে রক্তাল্পতার বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন শারীরিক অবস্থার দুর্বলতা, অলসতা, চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, মুখে ঘা প্রভৃতি।