হোমরাজ্যগঙ্গাসাগর মেলার ইতিকথা

গঙ্গাসাগর মেলার ইতিকথা

গঙ্গাসাগর মেলার ইতিকথা

এবারের মত শেষ হল গঙ্গাসাগর মেলা। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু পৌরাণিক কাহিনী। জানালেন দেবস্মিতা নাগ।

কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে গঙ্গা তথা হুগলি নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে অবস্থিত ছোট্ট একটি দ্বীপ সাগর দ্বীপ। এই দ্বীপকে ঘিরে প্রচলিত আছে নানান পৌরাণিক কাহিনী। কথিত আছে, প্ৰাচীন কালে এখানে সাংখ্য দর্শনের প্রবক্তা কপিল মুনির আশ্রম ছিল। সগর রাজা যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন, তখন সব জায়গা থেকে ঘোড়া ফেরত এসেছিল, কারণ সব রাজাই বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু একটি ঘোড়া ফেরেনি।

তাকে খুঁজতে খুঁজতে সগর রাজার ষাট হাজার ছেলে যখন কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছলো, তখন তারা দেখলো সেই ঘোড়াটি আশ্রমে বাঁধা আছে। কারণ সে নাকি মুনির ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। এতে সগর রাজার ছেলেরা কপিল মুনিকে যথেচ্ছ গালিগালাজ করায় মুনি রুষ্ট হয়ে সগর রাজার ষাট হাজার ছেলেকে ক্রোধাগ্নিতে ভস্মীভূত করেন। সেই ভস্ম ধুয়ে ফেলার জন্য সগর রাজার পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গা নিয়ে আসেন (রামায়ণ,বালকান্ড,অধ্যায়:২৩)। সেই থেকে সাগরদ্বীপ পুণ্যতীর্থ প্রতিবছর এখানে মকর সংক্রান্তিতে অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষ দিনে যে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় সেটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা। প্রথমটি কুম্ভ।

পৌষ মাসের শেষ দিনটিতে যখন আপামর বাঙালি পিঠে পুলিতে রসনা তৃপ্তিতে ব্যস্ত থাকে, তখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ গঙ্গাসাগরে পুণ্য স্নানের জন্য এই পবিত্র মোহনায় সমাগত হন। এই বিপুল সমাগম এই দিনটিকে বঙ্গ সংস্কৃতিতে একটি অন্য মাত্রা দেয়। তবে বিহার ও উত্তর প্রদেশের পুণ্যার্থীই বেশি। এই মেলায় হিমালয়ের প্রত্যন্ত কোণের নাগা সন্ন্যাসীদের বিরল সমাগম হয়।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে সূর্য তার উত্তরায়ণ যাত্রা শুরু করে। যদিও ভৌগোলিক মত অনুযায়ী, উক্ত ঘটনাটি ঘটে ২৩শে ডিসেম্বর তারিখে।এখানে পুণ্যস্নানের নির্দিষ্ট সময় ও নির্ঘন্ট থাকে।সাধারণত ৪ দিন ধরে এই স্নানানুষ্ঠান চলে। তবে বর্তমান অতিমারী পরিস্থিতির কারণে মেলা প্রাঙ্গনে বহু বিধি নিষেধ জারি হওয়ায় জনসমাগমও এ বছর খুবই কম হয়েছিল।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img