হোমPlot1গরুর দুধে কি সত্যিই সোনা আছে?

গরুর দুধে কি সত্যিই সোনা আছে?

গরুর দুধে কি সত্যিই সোনা আছে?

ডঃ কল্যাণ চক্রবর্তী
গরুর দুধে কি সোনা আছে? “হ্যাঁ আছে”, দীপ্ত উত্তর গোয়ালার স্নাতকোত্তর পাঠরত মেয়ে রাধার। “বিজ্ঞানের যে যুক্তিতে কীটনাশক-দুষ্ট ঘাসপাতা আর গোখাদ্য খেয়ে গরুর দুধে কীটনাশকের অবশেষ (Residual Toxicity) জমে এবং বামপন্থী বিজ্ঞানীরা তা বারবার সচেতন করে দেন, সেই একই যুক্তিতে গরুর দুধের মধ্যে মাটির কণায় রয়ে যাওয়া কমবেশি সূক্ষ্ম পরিমাণ সোনা Auriferous plants-এর মাধ্যমে গরুর শরীরে প্রবেশ করাও অসম্ভব নয়। অসম্ভব নয় মানুষের দেহে সোনা জমার সম্ভাবনাও।”

রাধার কথায়, “গোয়ালা সমাজে একটি প্রবাদ আছে, ‘গাই গরুর মুখে দুধ’; শহুরে বাবুরা হেসেই কুটিপাটি হয় এ কথা শুনে। এর অর্থ শহর ধরতে পারেনি, তাদের চিরাচরিত দ্বন্দ্বমূলক-বস্তুবাদ দিয়ে। গরু যেমন খাবে, তেমনই তার দুধের গুণগত ও পরিমাণগত মান হবে৷ গরু যে ‘মুখে দুধ’ দেয়, তা গ্রাম জানে, শহর জানে না, শহরের সেকুলার রাজনীতিবিদেরা তো জানেই না।”

রাধা আরও জানালো, “ভারতের নানান অঞ্চলের লোকসমাজ জানে, কোন ফসল, কোন ফার্নালিস খাওয়ালে গরুর দুধে সোনা বাড়ে। অপেক্ষা করুন, আসন্ন জৈব-ভারত (India in Organic Farming)-এ দেশীয় গরুকে পরিমাণমতো ভেষজগুণ-সম্পন্ন গোখাদ্য খাইয়ে Medicinal Milk তৈরি করবে এবং তার বিশ্ববাণিজ্যও করবে গোয়ালা সমাজ। যারা যত্রতত্র গরুর দুধে ‘সোনা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারাই কাজের মেয়েকে পাঠিয়ে মেডিসিনাল মিল্ক আগে কিনবেন, হলফ করে বলতে পারি৷ যেমন করোনা পরিস্থিতিতে গোপনে গোমূত্র খেয়েছেন অনেকে বাঁচার অদম্য আগ্রহ নিয়ে।”

এবার রাধাকে জিজ্ঞেস করলাম, কথায় এত বলিষ্ঠতা এলো কীভাবে? জবাবে রাধা বললেন, “সে এক বামা মাস্টারের গল্প! তিনিই তখন ‘সরকার’, এ তল্লাট শাসন করে বেড়ান। সদলবলে মর্নিং ওয়াক করতে এসে দুধ নিয়ে যেতেন। এসেই চারপাশে ছুটোছুটি, আর সে কী হম্বিতম্বি! গরুকে কী খাওয়াচ্ছি, কতটা খাওয়াচ্ছি, ফসলে কীটনাশক দিচ্ছি কিনা, দুধের বালতিতে গোপনে জল নিয়ে দুইতে যাচ্ছি কিনা, ইত্যাদি। বলতেন, ‘পেস্টিসাইড স্প্রে করা ফসল গরুকে খাওয়াবি না, মনে থাকে যেন।’ তিনিই শেখালেন, ‘জানিস, পেস্টিসাইড এখানকার জমিতে স্প্রে করলে, কুমেরুবৃত্তে পেঙ্গুইনে তার অবশেষ পাওয়া যাবে।’ তারপর একদিন বামা মাস্টারের ক্ষমতা গেলো, তবুও বৃদ্ধ জ্যাঠামশাইয়ের মতো নব্যদের নিয়ে জনৈক রাজনৈতিক নেতাকে ভেংচি কেটে বলতেন, ‘ওঃ শালা, দুধে সোনা!’ আমি শুধু তাকে একবার বলেছিলাম, যে যুক্তিতে কীটনাশক-দুষ্ট খাবার খেয়ে গরুর দুধে পেস্টিসাইডের Residual Toxicity হয়, একই যুক্তিতে Auriferous plants খেয়ে গরুর দুধে সোনা পাওয়া যাবে না কেন? আপনার কাছে কি নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে, কোন ফসল-ছাইয়ে কত পিপিএম, কত পিপিবি সোনা মজুত আছে? পুষ্টিকর দুধ সেবন করতে হলে দেশী গরু নিয়েও গবেষণা করতে হয়। কোন ব্রিডের কী বৈশিষ্ট্য জানতে হয়।”

তারপর কী হল! ………. “চাড্ডির মেয়ে’, ‘হাড্ডির মেয়ে’, ‘গোবর-খেকো’, ‘গোমুত-খেকো’ বলে সে কী গালাগাল! হ্যাঁ, আমরা গোবর-গোমুত খাই। কিন্তু উদ্ভিদকে পরম আদরে খাইয়ে, তার প্রসাদ পাই। তবে হ্যাঁ, গরুর সংখ্যা যেভাবে কমছে, গ্রাম-ভিত্তিক ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতার পক্ষে একান্তই আতঙ্কের।”

রাধাকে শুধু বললাম, আশার কথা এটাই, “শ্রদ্ধেয় গান্ধীজী গোবরকে বলেছেন ‘সোনা সার’, আর গোমূত্রকে ‘রাজা সার’।” এবার গান্ধীগিরি করতে হবে। আপাতত রাজনৈতিক তর্জাটা ‘সোনা সার আর রাজা সার’-এ পৌঁছক। সিকিমের মতো পশ্চিমবঙ্গকে Organic Farming State ঘোষণা করা হলে, তবেই গরুর সংখ্যা বাড়বে। সাধারণ মানুষ চান, রাজ্যে ‘ওপারেশন ফ্লাড/হোয়াইট রেভোলিউশন’ হোক। কারণ “ধান ধন বড় ধন/আর ধন গাই/সোনারূপা কিছু কিছু/আর সব ছাই।”

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img