হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে কমবয়সীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। খাদ্যাভ্যাস, লাইফস্টাইল থেকে মানসিক চাপ, এর পিছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’। তাই ডাক্তারদের চর্চায় উঠে আসছে হৃদরোগ এবং এর প্রতিকারের কথা। বিশিষ্ট চিকিৎসক সৌরভ কোলে জানিয়েছেন, আগে হাতে অল্পবয়সী হৃদরোগীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। এখন সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছে। এর জন্য মানুষের জীবনযাপনের সমস্যাকে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এখন অনেকেই রাত জেগে পড়াশোনা করেন। আগের মতো ঘড়ি ধরে ঘুম নয়। ভোর তিনটে-চারটেয় তাঁরা ঘুমোতে যান, যা হৃদরোগের বিপদ ডেকে আনছে।
সৌরভবাবুর কথায়, একই সমস্যা রয়েছে কর্মক্ষেত্রেও। এখন অনেকেই দিনের পর দিন রাত জেগে কাজ করতে বাধ্য হন। লাইফস্টাইলের এই পরিবর্তন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে তাঁর ধারণা। সৌরভবাবু বলেন, লাইফস্টাইলে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেওয়া জরুরি। বয়স যাই হোক না কেন, বুকে কোনওরকম ব্যথা অনুভব করলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সৌরভ কোলে।
সৌরভবাবুর মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খাদ্যাভ্যাসকে হৃদরোগের অন্যতম বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অল্প বয়স থেকেই যাঁরা জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও দুগ্ধজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন, ভবিষ্যতে তাঁদের হার্টের সমস্যা হতে পারে।
যাঁরা অত্যধিক ধূমপান করেন, তাঁদেরও সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বাবা-মায়ের হার্টের সমস্যা থাকলে, সন্তানের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মানসিক চাপের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। করোনাকালে সেই চাপ আরও বেড়েছে বলে তাঁদের ধারণা। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে হৃদ্রোগ এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা জড়িত।
ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে।
তবে মানসিক চাপ সবার ক্ষেত্রে একরকম হয় না। অনেকেই অত্যন্ত চাপের মধ্যেও নিজেদের শান্ত রাখতে পারেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটে না। মনে চাপ বাড়লে হার্টে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছয় না। রক্ত চলাচলও ব্যাহত হয়।