হোমPlot1বাংলায় সর্বপ্রথম জগদ্ধাত্রীর আরাধনা কোথায়, কীভাবে সূচনা হয়েছিল, জানেন কি?

বাংলায় সর্বপ্রথম জগদ্ধাত্রীর আরাধনা কোথায়, কীভাবে সূচনা হয়েছিল, জানেন কি?

বাংলায় সর্বপ্রথম জগদ্ধাত্রীর আরাধনা কোথায়, কীভাবে সূচনা হয়েছিল, জানেন কি?

শুভদীপ রায় চৌধুরী
জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা বঙ্গে সর্বপ্রথম করেছিলেন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। কথিত আছে, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র আনুমানিক ১৭৫৪-৫৫ সালে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। এই পুজোর প্রচলন নিয়ে নানান জনশ্রুতি রয়েছে। বাংলায় তখনও নবাবি শাসন‍।  রাজনৈতিক কারণে কৃষ্ণচন্দ্রকে মুর্শিদাবাদের কারাগারে বন্দি করেন নবাব। কিছুদিন পর মুক্তি পেয়ে নদিয়ারাজ ফিরছিলেন কৃষ্ণনগরে। সেদিন ছিল দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমী। আর বিসর্জনের বাজনা শুনে কৃষ্ণচন্দ্র বুঝতে পারলেন,  উমা ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে। পুজো করতে না পারার কষ্টে ব্যথিত হয়ে নৌকাতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। আর স্বপ্নে দেখেন এক রক্তবর্ণা, চতুর্ভুজা কুমারী দেবী তাঁকে আদেশ দিচ্ছেন, আগামী কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে পুজো করতে। এ ভাবেই জগদ্ধাত্রীপুজোর সূচনা হয় বাংলায়।

তবে এ নিয়ে আরও কাহিনী রয়েছে। ইংরেজদের বন্ধু  সন্দেহে মীরকাশিম কৃষ্ণচন্দ্র ও তাঁর পুত্র শিবচন্দ্রকে বন্দি করেন। তখন প্রাণরক্ষার আবেদন করে কৃষ্ণচন্দ্র তান্ত্রিক কালীশঙ্কর মৈত্রের শরণাপন্ন হন। এরপরই কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে দেখেন, প্রভাত সূর্যের মতন গাত্রবর্ণ, কুমারী তাঁকে পুজো করার আদেশ দিচ্ছেন। দেবী বলেন, তাঁর কৃপায় কৃষ্ণচন্দ্র মুক্তি পাবেন। এই কারণে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির প্রতিমা আলাদা, কুমারী দেবীর মতন পূজা পান।

কিছুদিন পরই কৃষ্ণচন্দ্র মুক্তি পান। কালীশঙ্করকে স্বপ্নের কথা জানান ও তাঁকে পুরোহিতের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। যদিও বংশের কুলগুরু এই নতুন দেবীর পূজার বিষয়টি মানবেন কিনা,  সে বিষয়ে সংশয় ছিল। পরে অবশ্য সমস্যা মিটে যায় এবং শুরু হয় রাজবাড়ির পুজো।

এই বংশের প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল, সিংহটি ঘোড়ামুখো সিংহ। সিংহটি প্রতিমার সঙ্গে আড়াআড়িভাবে স্থাপিত, যা প্রচলিত মূর্তিতে দেখা যায় না। একসময় কৃষ্ণচন্দ্রের হাতে করে পুজো করা পাথরের জগদ্ধাত্রী, দুর্গা, পাঁচ মাথা শিব ও শিবলিঙ্গ ছিল। তবে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হলেও কৃষ্ণনগর পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায়। র‍্যাডক্লিফের ভুল মানচিত্রের জন্য এই সমস্যা হয়। সেই সঙ্গে বিগ্রহও চলে যায় পাকিস্তানে। এই সময় রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী পদক্ষেপ নেন। কৃষ্ণনগরকে ফের এ দেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ভাঙা মূর্তিটিও ফেরত পায় নদিয়ার রাজপরিবার।

এখনও আগের মতো নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিনবার পুজো হয়। খিচুড়ি, পোলাও, তিন কিংবা পাঁচ রকমের মাছ, তরকারি, মিষ্টি, পায়েস দিয়ে মূলত ভোগ দেওয়া হয়। রাজপরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো এখন প্রকৃত অর্থে সর্বজনীনের রূপ নিয়েছে। গ্রামের বহু মানুষই ভিড় জমান এখানে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img