অশোক সেনগুপ্ত: রবীন্দ্রস্মৃতির সঙ্গে ছবি নেই, এরকম ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, সন্দেহ। আমারও আছে অজস্র। ঝুড়ি ঝুড়ি সেরকম ছবি তুলেছি। হারিয়েও গিয়েছে। তাতেও যত ছবি আছে, সেগুলো দেখছিলাম। কত গল্প, কত স্মৃতি! কিন্তু বেছে নিলাম ভাঙাচোরা একটা ঐতিহ্য।
১৯৩৮-এর ২১ মে কালিম্পং থেকে রবীন্দ্রনাথ এই বাড়িতে আসেন। বাইরে ছিল ক্যামেলিয়া গাছ। আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর করার সুবাদে কলকাতার ওয়ার্টার্লু স্ট্রিটের এক প্রাচীন ভবনের বিশদ খোঁজ করছিলাম। তার সূত্রে পরিচয় হয় সেটির অন্যতম ওয়ারিশ মহম্মদ ফজলুল করিমের সঙ্গে। পরিচয় ঘনিষ্ঠ হয়। প্রায় এক দশক আগে তাঁর সহযোগিতায় মংপুতে গিয়েছিলাম। রবীন্দ্রস্মৃতি ধন্য পাহাড়ি উপনিবেশ দেখতে গিয়ে পেলাম এটি। চিত্রার্পিতের মতো তাকিয়েছিলাম জীর্ণ, ভগ্ন বাড়িটির দিকে।
ওখানে বসেই কবি লেখেন ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি। পটভূমি অবশ্য আলাদা—
“এইখানে বাসা বেঁধেছেন
শালবনে ছায়ায়, কাঠবিড়ালিদের পাড়ায়।
সেখানে নীল পাহাড় দেখা যায় দিগন্তে,
অদূরে জলধারা চলেছে বালির মধ্যে দিয়ে,
পলাশবনে তসরের গুটি ধরেছে,….।”
প্রতিমা দেবীকে ‘কল্যাণীয়াষু বৌমা’ সম্বোধন করে এই বাড়ি সম্পর্কে তাঁর ‘বাবামশায়’, মানে রবীন্দ্রনাথ লেখেন, “চমৎকার জায়গা”। বাড়িটা তো রাজবাড়ি— স্পষ্ট বোঝা যায় ছিল ইংরেজের বসতি। ঝকঝক করছে। কাঠের মেঝে, আসবাবগুলো পরিস্কার, উপভোগ্য, উপরে নিচে ঘর আছে বিস্তর, বিছানা আনার দরকার ছিল না।’’
আমার এই লেখার শিরোনাম যে গানের অংশ, তার গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুরকার ও গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আর ঋণী মুহূর্তের মধ্যে কালো ছবি ফর্সা করে দেওয়ার চিকিৎসক পুলকেশ ঘোষের কাছে।
(বিশিষ্ট সাংবাদিক অশোক সেনগুপ্ত দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাজ করেছেন বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও)।