হোমPlot1কেশপুরের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন 'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যের স্রষ্টা মুকুন্দরাম

কেশপুরের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের স্রষ্টা মুকুন্দরাম

কেশপুরের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের স্রষ্টা মুকুন্দরাম

শুভদীপ রায় চৌধুরী
কলকাতার পাশাপাশি দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছেন জেলার মানুষও। জেলার বিভিন্ন পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের গড় সেনাপত্তা গ্রামের দেব পরিবারের দুর্গাপুজোয় আজও ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা।

এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি কঙ্কন মুকুন্দরামের স্মৃতি। গড় সেনাপত্তা গ্রামের দেব পরিবারের পুজো প্রায় সাড়ে সাতশো বছরের প্রাচীন। রাজা বাঁকুড়া দেব এই পরিবারের  দুর্গাপুজোর সূচনা শুরু করেন। এখানে আজও আঠারো হাতের দেবীর পুজো করা হয়।

দেব পরিবারের আট কর্তা গোকুলচন্দ্র দেব, লক্ষ্মণ দেব, রামকৃষ্ণ দেব, হরি দেব, হরি সাধন দেব, নীল মাধব দেব, হরিপদ দেব, অরুণ কুমার দেব আজও বনেদীয়ানাকে মেনেই দুর্গাপুজো করে আসছেন।
   
মার্কেণ্ডেয় শ্রীশ্রীচণ্ডী মতেই তৈরি হয় এখানকার অষ্টাদশভুজা দুর্গার মূর্তি। দেবীর আঠেরোটি হাতে থাকে লাঠি, ঘন্টা, আয়না, ধনুক, পাকানো দাড়, জমরু, ত্রিশূল, গদা, বজ্র, খড়গ, অঙ্কুশ, চুলের মুঠি এবং শূল ও চক্র। সপ্তমী থেকে মহানবমীর মধ্য রাত্রি পর্যন্ত বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো, আখ এবং ছাগল। বহু ভক্ত তাদের মানত পূরণের জন্য বলির সামগ্রী নিয়ে আসেন। ষষ্ঠীতে সেনা পত্তার বাঁধে দেবীর বোধন হয়। তারপর অধিবাস, আমন্ত্রণ এবং দেবীকে অস্ত্রে সাজানো হয়। সপ্তমীতে কুবাই নদীর জলে হয় কলাবউ এর স্নান।

এই বাড়ির পুজোয় সকলেই বংশপরম্পরায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। যারা কুমোর তারা বংশপরম্পরায় মূর্তি তৈরি করে আসছেন, আবার যিনি কুল পুরোহিত, তিনিও বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন, এমনকি যাঁরা বলির কাজ করেন, তাঁরাও বংশপরম্পরায় করছেন সেই কাজ। এই দেব পরিবারে একটি অষ্টধাতুর মূর্তিও রয়েছে। সেই মূর্তি আলাদাভাবে পুজো করা হয় একই সঙ্গে।  মহানবমীতে অনন্ত ৫০টি পাঁঠাবলি হয়। আজও দেব পরিবারের পুজোর দিনে বাজে নহবত। তবে শুধুমাত্র প্রদীপ নয় এখানে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত জ্বলে হোমের আগুন। পুরানো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও এই বাড়িতে চারদিন ধরে যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আদিবাসীদের দল নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এসে অনুষ্ঠান করে। 

দশমীতে দেব পরিবারে অপরাজিতা পুজোও হয়। অপরাজিতা পুজোর পরই  প্রতিটি সদস্য নীল অপরাজিতার মালা ও বেড়ি শরীরে ধারণ করেন। একসময় কবি কঙ্কন মুকুন্দরাম ছিলেন এই জমিদার বাড়ির সভাকবি। কথিত আছে, এখানকার দেবীপূজাকে অবলম্বন করে মুকুন্দ রাম লিখেছিলেন চণ্ডীমঙ্গল কাব্য। সেখানে আঠারো হাতের দুর্গার উল্লেখ আছে। ইতিহাসকে খুঁজে পেতে গেলে আপনাকে পৌঁছে যেতেই হবে কেশপুরে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img