এবারের বইমেলায় বড় বড় স্টলগুলির জায়গা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে ৩৫ শতাংশের বেশি জায়গা উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানিয়েছেন কলকাতা বইমেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু দে।
তিনি জানান, এবারের বইমেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৬০০-র মতো স্টল থাকছে। লিটল ম্যাগাজিনের স্টল সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০০ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ বছর অনেক নতুন নতুন প্রকাশনা সংস্থাকে জায়গা দেওয়া হচ্ছে।
গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, কলকাতা বইমেলার পরিবর্তিত সূচিকে স্বীকৃতি দিয়েছে জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন। তিনি বলেন, বইমেলার বিশেষ আকর্ষণ কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে ১১ ও ১২ মার্চ। ত্রিদিববাবু সাফ জানিয়ে দেন, সরকার নির্ধারিত সমস্ত কোভিড বিধি মেনেই মেলা হবে। মাস্ক ছাড়া কোনও অবস্থাতেই মেলায় ঢোকা যাবে না। তাই সবাইকে মাস্ক পরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি থাকছে বাংলাদেশ। এই উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ওপার বাংলার বিশিষ্ট কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান কো-অডিনেটরও। সাংবাদিক বৈঠকে আবুল নাসের দুই বাংলার মানুষের আবেগ এবং কলকাতার সঙ্গে মুজিবুর রহমানের বিশেষ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।
কামাল নাসের বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে এবারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ ছিল মূলত: স্বাধীনতার ডাক, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আহবান এবং অনুপ্রেরণা। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে “মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড” রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে।মুজিববর্ষে তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে কেন্দ্র করেই এবারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন গড়া হবে।”
কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত তৌফিক হাসান বলেন, “এবারের বইমেলায় বাংলাদেশকে থিম কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টিকে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, এবছর একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ।” তৌফিক হাসান বলেন, “মেলার ৩টি প্রবেশদ্বার বা গেট এবার বাংলাদেশ তৈরি করছে। এই গেট ৩টি বঙ্গবন্ধুর লেখা ৩টি বই (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন)-এর আদলে নির্মাণ করা হবে।”
বইমেলায় এবার ৩ ও ৪ মার্চ বাংলাদেশ দিবস উদযাপিত হবে এবং শিশু দিবস উদযাপন হবে ৬ মার্চ। সাংবাদিক বৈঠকে “মুজিব চিরন্তন” থিম-এর লোগো উম্মোচন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এবছর বাংলাদেশের ৫০টি স্টল থাকছে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশিষ্ট লেখিকা সেলিনা হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও কলকাতা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি, ইরান, আর্জেন্টিনা, স্পেন, মেক্সিকো এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ।
সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক প্রাঙ্গনে কলকাতা বইমেলার সূচনা হচ্ছে ২৮ ফেব্রুয়ারি, বিকেল সাড়ে ৩টেয়। চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত।