(CRIME REPORTER: এই পর্বে শোনানো হবে নানান অপরাধের কাহিনী। বিভিন্ন রহস্যজনক ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বিখ্যাত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর তদন্তের রোমহর্ষক গল্প। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর গোপনে খবর সংগ্রহের গল্প আড্ডার মত করে উঠে আসবে বিশিষ্ট সাংবাদিক হীরক কর -এর কলমে।)
হীরক কর : মনে হয়েছিল তদন্ত থিতিয়ে গেছে। ইডি-র নামে ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে টাকা তোলা একশ্রেণীর সাংবাদিক ঘুরে বেরাচ্ছিলেন নিশ্চিন্তেই। বাধ সাধল বিধান নগর পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট। সোমবার বেশ রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিকদের তোলাবাজির মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত রায় চৌধুরীকে। আজ সকালে তাঁকে বিধাননগর আদালতে হাজির করা হলে, বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। আর এতেই ভয়ে কাঁপছে একশ্রেণীর তোলাবাজ সাংবাদিক।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই তীব্র আলোড়ন পড়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদজগতে। জানা গেছে, ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে এবার সুদীপ্ত রায় চৌধুরীর মুখোমুখি বসে ওই তোলাবাজ সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে বিধান নগর পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট।
ইডির ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে তোলাবাজি মামলায় গোয়েন্দাদের জালে এখন সুদীপ্ত রায় চৌধুরী। রোজভ্যালির চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার অভিযোগে আগেও তাকে গ্রে’ফতার করেছিল ইডি। তাকে ফের এরার গ্রে’ফতার করল বিধাননগরের গোয়েন্দা বিভাগ। এই সুদীপ্ত রায় চৌধুরী ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর নির্মল কুমার মোসা বিধাননগর উত্তর থানায় একটি এফআইআর করেন (এফ আই আর নম্বর, ১৪০/২০)। ওই এফআইআরে, ইডির ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে সুদীপ্ত রায় চৌধুরী সহ কয়েকজন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে বিধাননগরের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট।
ইডির ওই এফআইআরে অ’ভিযুক্তদের বিরুদ্ধে; অপরাধমূলক প্রতারণা, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা, জালিয়াতি )৪৬৮ ধারা), তোলাবাজির জন্য কাগজপত্র ও ইলেক্ট্রনিক রেকর্ড ব্যবহার (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারা), প্রতারণার জন্য জাল সিল ও সই ব্যবহার (৪৭২ ধারা), জাল ডকুমেন্ট রাখা ও ব্যবহার (৪৭৪ ধারা) ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (১২০-বি) ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট। সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অ’ভিযুক্ত সুদীপ্ত রায় চৌধুরীকে। এই গ্রেফতারের পরেই ভয়ে কাঁপছেন বেশ কয়েকটি বিখ্যাত বাংলা নিউজ চ্যানেলের কয়েকজন সাংবাদিক।
তদন্তে জানা গেছে, বিভিন্ন চিটফাণ্ডে জড়িত থাকার ভুয়ো নথি দেখিয়ে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো হত। ইডির ভুয়ো কাগজপত্র সামনে রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হতো এবং এইসব মামলা থেকে নাম সরিয়ে দেবার নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হত। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানোর জন্য একাধিক বাংলা চ্যানেলের কয়েকজন সাংবাদিককে ব্যবহার করা হত।
সাংবাদিকদের টাকা, ফ্ল্যাট, এসইউভি গাড়ি, বাইক, দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সাংবাদিকদের তোলাবাজি কাণ্ডের তদন্তে গোয়েন্দারা চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছেন। অভিযোগ, ১৭ জন ব্যবসায়ী ও নেতার কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা তুলেছেন ছয় সাংবাদিক। সুদীপ্ত রায় চৌধুরীর গ্রেফতারের পর এবার কি সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হবে ? উঠেছে প্রশ্ন।
সাংবাদিকদের আগেই জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। বিধাননগর ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট সোমবার সুদীপ্তকে কোর্টে তুলে পুলিশ হেফাজত চায়। সঙ্গে সঙ্গেই সাত দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। এবার সুদীপ্ত রায় চৌধুরীকে মুখোমুখি বসিয়ে অভিযুক্ত তোলাবাজ সাংবাদিকদের জেরা করা হতে পারে।