দীপ্তা ঘোষ। জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক। কলকাতার জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি থাকলেও, চাইলে চাকরিও করতে পারতেন। তবে এখন দীপ্তার পরিচয় তিনি মহিলা ‘ক্যাব-চালক’।
পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কিছু দিন চাকরি করেছিলেন দীপ্তা। তারপর চাকরির জমানো টাকায় কিনে ফেলেন চার চাকার গাড়ি। এই কাজে মায়ের কাছ থেকেও পেয়েছেন অর্থ।
চাকরির জন্য নিজের রাজ্য ছাড়বেন না, এটা আগেই ঠিক করে নিয়েছিলেন বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা দীপ্তা। কারণ, বাইরে চলে গেলে, বাড়িতে মা একা হয়ে পড়বেন। তখন মাকে দেখবে কে? তাই স্বাধীন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ক্যাবের স্টিয়ারিংকে।
২০২০ সালে মারা যান দীপ্তার বাবা মোহিতকুমার ঘোষ। পেশায় তিনিও ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে বাংলার বাইরে। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা’কে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেননি। সেইসঙ্গে সঙ্গে রয়েছে ছোট বোনের দায়িত্ব। মায়ের পাশে থাকার জন্য রাতে অবশ্য গাড়ি চালান না দীপ্তা।
তাই ২০২১ সালে গাড়ি কিনে ক্যাব চালাতে শুরু করেন। তেল আর গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাদ মাসের শেষে তাঁর আয় ৪০ হাজারের মতো, যা দিয়ে মা-মেয়ের জীবন এখন ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে। দীপ্তার বোন ইতিমধ্যে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর বিয়েও হয়ে গিয়েছে।
কলকাতায় মেয়ে ক্যাবচালক নেই বললেই চলে। এই কাজে তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন মা। ক্যাব চালাতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে দীপ্তাকে। পুরুষ যাত্রীরা প্রায় সবাই ভাল ব্যবহার করলেও, কিছু কিছু খারাপ ব্যবহার পেয়েছেন মহিলা যাত্রীদের থেকে।
সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও ক্যাব-চালক? হামেশাই এই বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের কাছে এই প্রশ্ন শুনতে হয়। তবে তাঁকে আমল দিতে চান না এই তরুণী। যতই বাধা আসুক, তিনি গাড়ির স্টিয়ারিং ছাড়তে না।