হোমকলকাতাপুরনো কলকাতার না জানা কাহিনী

পুরনো কলকাতার না জানা কাহিনী

পুরনো কলকাতার না জানা কাহিনী

tarunতরুণ গোস্বামী

পুরনো কলকাতার অজস্র না জানা কাহিনী, গল্প। এই কলমের লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক-গবেষক তরুণ গোস্বামী। কল্লোলিনী কলকাতার অকথিত ইতিহাস, বইয়ে না ছাপা সেসব কাহিনীর শুরু হল আজ।

কলকাতাতে তো বটেই, ভূ-ভারতে এর দ্বিতীয় নজির আছে বলে আমার জানা নেই। ভাবতে পারেন টমাস আলভা এডিসন তাঁর তৈরি করা গ্রামোফোন একজন বাঙালিকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই গ্রামফোনটি এখনও চালু আছে। আমার ওই যন্ত্রটিতে রেকর্ড শোনার অভিজ্ঞতা আছে। যাঁকে এই উপহারটি দেওয়া হয়েছিল তিনি আর কেউ নন, স্বামী অভেদানন্দজী, শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য, স্বামীজীর গুরুভাই।

মহারাজ দুই দশকের বেশি আমেরিকায় ছিলেন। ও দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেছেন। আর তখনকার দিনের শ্রেষ্ঠ পন্ডিতেরা ছিলেন মহারাজের ব্যক্তিগত বন্ধু যেমন উইলিয়াম জেমস, নিকোলা টেসলা, এডিসন। জেমস ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানী। ওঁর সঙ্গে মহারাজ near death experience নিয়ে কাজ করেছিলেন। যদিও তখনকার পন্ডিতেরা ওঁদের মতটি মানেননি।

এখন যাঁরা এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরা মহারাজ এবং জেমসকেই গুরু, পথ প্রদর্শক মানেন।
স্বামীজীর ভক্ত ছিলেন টেসলা। স্বামীজীর সাথে এক হোটেলে থাকতেন, যাতে কোনো বক্তৃতা মিস না করেন। টেসলার সাথে মহারাজের গভীর সখ্যতা ছিল।

মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণের একমাত্র শিষ্য, যাঁর কণ্ঠস্বর পাওয়া যায়। তখন সবে ফোনোগ্রাফ আবিষ্কার হয়েছে। মহীশূরের রাজা তাঁর গুরু স্বামী বিবেকানন্দের কন্ঠস্বর রেকর্ড করেন। কালের নিয়মে তা হারিয়ে গেছে। স্বামীজী যখন দ্বিতীয়বার বিদেশে যান, 1900 সালে, মেরী হেলের শিকাগোর বাড়িতে দুদিন ধরে cylinder equipment- এ তাঁর কণ্ঠস্বর ধরে রাখা হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের, সেটির হদিশ পাওয়া যায় না।

1936 সালে ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ। স্বামী অভেদানন্দজীর বক্তৃতাটি পাওয়া যায়। মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি থেকে তাঁর সংস্কৃত স্তোত্র প্রকাশিত হয়েছিল।

মহারাজ না থাকলে ফ্রাঙ্ক ডোরাকের আঁকা ঠাকুরের ছবিটি আমরা পেতাম না। দ্বিতীয়ত দার্জিলিং-এর শ্মশানে নিবেদিতাকে দাহ করা হয়েছিল। মহারাজ তখন আমেরিকায়। 1921 সালে ফিরে এসে অর্থাৎ নিবেদিতার মৃত্যুর দশ বছর পরে জাতির পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ একটি ফলক বসানো হয় মহারাজের উদ্যোগে । সেই ফলকটি এখনও আছে।

স্টার থিয়েটারের পিছনে মহারাজের প্রতিষ্ঠিত শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ। উৎসাহী মানুষজনকে ওখানের মহারাজেরা গ্রামোফোনটি বাজিয়ে শোনান। অভেদানন্দজীর পিতা রসিকলাল চন্দ্র ছিলেন স্বামীজীর পিতা বিশ্বনাথ দত্তর শিক্ষক। কালীপ্রসাদের বেদান্তের ওপর অগাধ জ্ঞান। স্বামীজী অভেদবাদী বৈদন্তিকের নাম দিয়েছিলেন অভেদানন্দ। ওই মঠে প্রায়ই নটি বিনোদিনী আসতেন। পাশের পাড়া স্টার লেনে ছিল তাঁর বাড়ি। ঠাকুরের মূর্তির সামনে চুপ করে বসে থাকতেন, কখনো বা কাঁদতেন। মহারাজের সাথেও গিয়ে আলাপ করতেন দীর্ঘক্ষণ।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img