মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রশংসা করে তৃণমূলের মুখপত্রে কলম ধরার জেরে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের (Anil Biswas) কন্যা অজন্তা বিশ্বাস (Ajanta Biswas)। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের (Suryakanta Biswas) বক্তব্যে তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সূর্যকান্তবাবু বলেছেন, “অজন্তা যা করেছে, তা কোনও ভাবেই লঘু করার ঘটনা নয়। অজন্তা ইউনিট সদস্য। তাই তাঁর বিরুদ্ধে যা করার ইউনিট করবে। এরপর কলকাতা জেলা কমিটি রয়েছে। তারপর রয়েছি আমরা। ওকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ও যা করেছে, তা কোনও ভাবেই মানা যায় না।”
অনিল-কন্যাকে ইতিমধ্যে শো-কজ করেছে সিপিএম। শনিবার সিপিএমের (CPM) রাজ্য কমিটির সদস্য কল্লোল মজুমদার বলেছিলেন, “অজন্তার বক্তব্য লিখিতভাবে পার্টিকে জানাতে ওকে আমি পরামর্শ দিয়েছি।” সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, “দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা ও বামপন্থী মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা তো দলীয় কর্মীর কাজ নয়। আমাদের দলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া আছে।
সেই পদক্ষেপ আমরা ইতিমধ্যে করেছি।”
অজন্তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। গত বুধবার তৃণমূলের মুখপত্রে অজন্তার ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক বিশেষ নিবন্ধের প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয়। তার পরেই রাজ্য সিপিএমের অন্দরে আলোড়ন পড়ে যায়। শনিবার অজন্তার লেখায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণগান ছিল।
তবে অজন্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। রবিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, “অনিল বিশ্বাসকে টেনে যাঁরা কুৎসিতভাবে অজন্তাকে আক্রমণ করছেন, তাঁরা মনে রাখুন, একাধিক সিপিএম ও বাম নেতা একাধিক কারণে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত অনুরোধও নেত্রী রক্ষা করেছেন। সেগুলি লেখা রুচি বিরুদ্ধ। কিন্তু বাধ্য করবেন না।”
“বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি” শিরোনামে তৃণমূলের মুখপত্র জাগোবাংলার সম্পাদকীয় পাতায় ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছেন অজন্তা বিশ্বাস। শনিবারই তার শেষ কিস্তি ছাপা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে অনিলবাবুর মেয়ের লেখা নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে সিপিএমের অন্দরমহলে। সেইসঙ্গে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্যের একদা শাসক দল।
অজন্তা লিখেছেন, “রাজ্য রাজনীতিতে নারীশক্তি নিয়ে লিখতে বসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া সে লেখা অসম্পূর্ণ। রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই বিরোধী নেত্রী হিসেবেও মমতা ইতিহাস গড়েছেন।”
তিনি লিখেছেন, “কঠিন লড়াইয়ে বারবার জয়ী হয়েছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। অগ্নিকন্যা, দিদি এবং ঘরের মেয়ে অভিধাও অর্জন করেছেন। কলকাতার হাজরা অঞ্চলের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী সাধারণ মেয়ে আজ টাইম ম্যাগাজিনে মনোনীত ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম হিসাবে।”
উপসংহারে অজন্তা লিখেছেন, “একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে নজির গড়েছেন সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে নিজের যোগ্যতায়। রাজনৈতিক ইতিহাসে বাঙালি নারী হিসাবে নিজেকেই অন্যতম সেরা প্রমাণিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশস্ত করেছেন নারীদের জয়যাত্রা।”
অজন্তা প্রেসিডেন্সি কলেজের লড়াকু এস এফ আই নেত্রী ছিলেন। পরেও কিছুদিন দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। বাম জমানাতেই তিনি রবীন্দ্রভারতীতে চাকরি শুরু করেছিলেন।