দেবস্মিতা নাগ
ছোটবেলার জীবন বিজ্ঞান বইয়ে ফেলে আসা বিজ্ঞান সম্মত নামগুলো বেমালুম ভুলে গেলেও, এই নামটা অনেকেরই ঠিক মনে আছে, ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera Indica), “ম্যাঙ্গো”, আমাদের আম। আম কথাটির অর্থ সঞ্চিত খাদ্য। ঘুরে ফিরে বছরের সেই সময়টা এসেই গেলো, যখন ম্যাঙ্গিফেরা ‘ইন্ডিয়া’র বাজারে ঘুরে ফিরে সবার রসনা তৃপ্ত করছে। আমের কিন্তু এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে।
৩২৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে স্বয়ং আলেক্সান্ডার (Alexander) সিন্ধু উপত্যকার (Sindhu Valley) আমে মজেছিলেন। সেই থেকেই আমের বিশ্বভ্রমণ শুরু। আম ছড়িয়ে পড়ে ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মালয় দ্বীপে।
পরে হিউয়েন সাংকেও আমের সুখ্যাতি করতে দেখা যায়। আফ্রিকা (Africa) থেকে ইউরোপ (Europe) সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আম। সম্রাট আকবর শাহবাগে এক লাখ আমের চারা লাগিয়ে এক বিরাট আম বাগান তৈরি করেছিলেন। ফলের মধ্যে সর্বাধিক প্রজাতি আমেই দেখা যায়। প্রায় 500 প্রজাতির আম পৃথিবীর বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যায়। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। সেই নামগুলির প্রত্যেকটির পিছনে রয়েছে একটি করে ইতিহাস। আমের নামের ইতিহাস টুকরো টুকরো করে আজ শোনাবো।
ফজলি : ধ্বংসপ্রাপ্ত গৌড়ের এক প্রাচীন কুঠিতে ফজলি বিবি নামে এক প্রৌঢ়া বাস করতেন। তাঁর বাড়ির উঠোনে প্রথম এই আমগাছের সন্ধান মেলে। ১৮ শতকে মালদহ (Maldah) জেলার কালেক্টর এই আমের নামকরণ করেন ফজলি।
এলাকার সন্ন্যাসী ফকিররা সেই আম খেতেন।কালেক্টর সাহেবের সাথে দেখা করতে গিয়ে ফজলি বিবি এই আম উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে যান। সাহেব “নেম” জিজ্ঞেস করায় উত্তর মেলে “ফজলি”। সাহেব ফলটির নাম ফজলি ভেবে বসেন।
ল্যাংড়া : ১৮ শতকে এক ফকির এই আমের চাষ করেন।ফকিরের পায়ে কিছু সমস্যা ছিল। সেই থেকেও তাঁর আমটিও ল্যাংড়া হয়ে যায়।
লক্ষ্মণভোগ ও গোপালভোগ : ইংরেজবাজারের চন্ডিপুরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ ও নরহাট্টার গোপাল চাষির নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছিল।
গোলাপখাস : এই নামের কারণ হলো, এই আমের গোলাপফুলের মত মিষ্টি গন্ধ ও লালচে গোলাপি রং।
গুটি ও আশ্বিনা : ছোট চেহারার জন্যেই মূলত এই আমের নাম গুটি। আর আশ্বিন মাসে পাকে। সেই কারণে আশ্বিনা।
আম্রপালি : গৌতম বুদ্ধের প্রথমা শিষ্যা ছিলেন আম্রপালি। আম্রপালিকে শৈশবে তার পালক পিতা একটি আম গাছের তলায় কুড়িয়ে পান। তাই তাঁর নাম হয়েছিল আম্রপালি। নগরবধূ আম্রপালি ভারতের সর্বকালের সর্বসেরা সুন্দরী নর্তকী হিসেবে খ্যাত। পরবর্তীকালে তিনি গৌতম বুদ্ধের চরণে আশ্রয় পান। তাঁর নামানুসারেই বিজ্ঞানীরা শংকর প্রজাতির একটি আমের নাম দেন আম্রপালি।
কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধ একটি আম্রকুঞ্জ উপহার স্বরূপ পেয়েছিলেন। সেখানে বিশ্রাম করে তিনি ক্লান্তি দূর করতেন। ঐতিহাসিক সে সব আম্রকুঞ্জে পৃথিবীটাকে আবার একবার মুড়িয়ে ফেলতে পারলে হয়তো পৃথিবী আরো একবার সুস্থ হয়ে উঠবে।