হোমPlot1ক্যান্সার, কিডনি থেকে ডায়াবেটিস, জটিল রোগ মুক্তিতে পথ দেখাচ্ছে সল্টলেকের হোমিও হাসপাতাল

ক্যান্সার, কিডনি থেকে ডায়াবেটিস, জটিল রোগ মুক্তিতে পথ দেখাচ্ছে সল্টলেকের হোমিও হাসপাতাল

ক্যান্সার, কিডনি থেকে ডায়াবেটিস, জটিল রোগ মুক্তিতে পথ দেখাচ্ছে সল্টলেকের হোমিও হাসপাতাল

নানা জটিল রোগের চিকিৎসায় একের পর এক  নজির গড়ে চলেছে সল্টলেকে গড়ে ওঠা হোমিওপ্যাথির চিকিৎসার জাতীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথি (এনআইএইচ)। খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। চলতি বছরের এপ্রিলে এই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা করিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন স্ট্রোক ও ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত দুই রোগী।

দু‌ই বছর আগে ব্রেন টিউমারের কারণে জ্ঞান হারান নদীয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা রীতা মণ্ডল। তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে। প্রায় ১০ দিন ধরে এই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। কিন্তু অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি। শেষ চেষ্টা হিসেবে রীতাদেবীকে এই হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর পরিজনরা। শুরু হয় চিকিৎসা। মিলতে থাকে সাফল্য। ক্রমশ রোগীর অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। প্রথম এমআরআই রিপোর্টে দেখা যায়, প্রথমে যে বিশাল আকারের টিউমার ছিল,  হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরুর পর সেটি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। এখন তিনি একেবারে সুস্থ। 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির ডিরেক্টর সুভাষ সিং

এ বছরের জানুয়ারিতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা আম্বিয়া বিবি। তাঁকে তড়িঘড়ি ভর্তি করা হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে। না, সেখানে রোগীর অবস্থার তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। এরপর  ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিয়ে আসা হয় সল্টলেকের এই হোমিওপ্যাথি হাসপাতালে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর শরীরের একটা দিক অকেজো হয়ে পড়েছিল। এক মাসের চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৭ মার্চ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন আম্বিয়া বিবি। আর এখন ধীরে ধীরে হাঁটতে পারছেন। তাঁর কথাবার্তাও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

শুধু রীতাদেবী বা আম্বিয়া বিবি নন, সল্টলেকের এই হাসপাতালে পা রাখলে, এমন অনেক রোগীর খোঁজ পাবেন, যাঁরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে মারণব্যাধি ক্যান্সার রোগী যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন কিডনির নানা সমস্যায় আক্রান্ত রোগীও।

হাসপাতালের আউটডোর বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির ডিরেক্টর সুভাষ সিং জানালেন, “প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে প্রায় ৩ হাজারের মতো রোগী আসেন। সকাল ৯টা থেকে ১২টা বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। মাত্র ৫ টাকার টিকিটে শুধু রোগী দেখা নয়, সমস্ত ওষুধও দেওয়া হয় একেবারে বিনামূল্যে।”

প্রতিদিন কাতারে কাতারে যে রোগীর দল এই হাসপাতালে ভিড় জমান, তাঁদের বেশিরভাগই কিন্তু রাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে আসা। বসিরহাট, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া থেকে শুরু করে বীরভূম, বাঁকুড়া, বাদ নেই কোনও জেলা। আসেন বাংলাদেশের রোগীরাও।

সুভাষ সিংয়ের কথায়, “রোগীরা চিকিৎসায় ভালো ফল পাচ্ছেন। তাই তাঁদের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। চিকিৎসায় কাজ না হলে, কেন তাঁরা আসবেন?”

সুভাষবাবু বলেন, “ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হলে,  একেবারে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তবে একেবারে শেষ পর্যায়ে আসা অনেক রোগীকে সুস্থ করে তুলতে না পারলেও, তাঁর আয়ুষ্কাল আমরা বাড়াতে পেরেছি।”

তিনি বলেন, শুধু ক্যান্সার নয়, কিডনি, ডায়াবেটিস, বাতের সমস্যা থেকে চর্মরোগ, সব ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাচ্ছেন তাঁরা। শুধু আউটডোর নয়, এখানে রয়েছে ১০০ শয্যার হাসপাতালও। সেখানে প্রয়োজনে রোগীদের ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে সল্টলেকের ৩ নম্বর সেক্টরে এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ূষ মন্ত্রকের অধীন।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img