দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবর বিপন্ন। সরোবরের তলদেশ বিষাক্ত গ্যাসে ছেয়ে গিয়েছে, যার জেরে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মাছ। সোমবার একদল বিশেষজ্ঞ এই সরোবর পরিদর্শন করেন এবং এর দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এই বিশেষজ্ঞদলে ছিলেন মৎস্য দফতর, জীব বৈচিত্র্য পর্ষদ এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা। পরিবেশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন এই সরোবরের দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ করে আসছে। অবশেষে রাজ্য সরকারের তিন দফতরের প্রতিনিধিরা সেই অভিযোগ মেনে নিলেন।
৭৩ একর এলাকা জুড়ে থাকা এই সরোবরকে বাঁচাতে অবিলম্বে ৯ হাজার কেজি চুনের দ্রবণ এবং পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ছড়ানোর পরামর্শ দেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরোবরের জলের তলদেশে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে জলের নীচে গাছ লাগাতে হবে। তার আগে ড্রেজিংয়েরও প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এর আগে এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, প্লাস্টিক-সহ নানা বর্জ্য মেশার ফলে রবীন্দ্র সরোবরের জলে দূষণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। জল দূষণ ছাড়াও এই জলাশয়ে মাছ-সহ নানা জলজ প্রাণীর মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পলি না তোলাকে দায়ী করা হয়েছিল।
পলির মধ্যে থাকা ধাতব এবং প্রাকৃতিক মৌলের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাবে খাবারের সমস্যা হচ্ছে জলজ প্রাণীদের। জলের দূষণ বাড়ায় ক্রমশ কমছে জলে অক্সিজেনের মাত্রা, তারতম্য ঘটছে তাপমাত্রার।
আমফানের পর থেকেই রবীন্দ্র সরোবরে মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা নজরে আসে। এরপরেই সরোবরের জল পরীক্ষা করে দূষণবৃদ্ধির বিষয়টি জানা যায়।
বিশিষ্ট পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষের মতে, দীর্ঘদিন ধরে পলি না তোলার কারণে জলের তলদেশে এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকায় জলের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। এছাড়া, প্লাস্টিক জলাশয়ের তলদেশে মাটিতে থাকা প্রাকৃতিক মৌল এবং রাসায়নিক মৌলের সংস্পর্শে আসায় জল আরও দূষিত হয়ে পড়ছে।
২০১৮ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত এই সরোবরের পলি তোলার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ কিছুই হয়নি বলে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ।
রবীন্দ্র সরোবরের ৫ বিঘা জমি মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে একটি বেসরকারি বিনোদন সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে আন্দোলনে নেমেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। এই সরোবরের ৮ নম্বর প্রবেশদ্বারের লাগোয়া জমির দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কেএমডিএ-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ মঞ্চ এবং লেক লাভার্স ফোরাম।
লেক লাভার্স ফোরাম ও মর্নিং ওয়াকার্স গিল্ড-এর পক্ষে পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ জানান, সবুজ মঞ্চ এবং লেক লাভার্স ফোরাম এই স্থানটিতে শুধুমাত্র বনসৃজন করতে চায়, যাতে করে একইসঙ্গে শব্দ, বায়ু এবং সরোবরের জলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।