অবশেষে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করল সিবিআই। সোমবার তাঁকে তলব করা হয়েছিল সিজিও কমপ্লেক্সে। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বার করে সিবিআই আধিকারিকেরা সন্দীপকে নিয়ে যান নিজাম প্যালেসে। এরপরই সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সন্দীপকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারির পর আরও তিন জনকে পাকড়াও করল সিবিআই। ধৃতদের নাম সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং আফসর আলি। এঁদের মধ্যে আফসর সন্দীপের নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। আর্থিক দুর্নীতিতে সন্দীপের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েক জনের নাম উঠে এসেছিল। তাঁদের মধ্যে এক জন হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা বিপ্লব সিংহ। বিপ্লবের সংস্থা ‘মা তারা ট্রেডার্স’ হাসপাতাল হাসপাতালে চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহ করত। গত সপ্তাহে সাঁকরাইলে বিপ্লবের বাড়ি এবং সংস্থার অফিসে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সোমবার তাঁকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই খবরের শিরোনামে চলে আসেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি কলকাতা হাই কোর্টে যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, সেখানে সন্দীপের বিরুদ্ধে মোট ১৫টি অনিয়মের উল্লেখ করেন তিনি। মূল অভিযুক্ত হিসেবে সন্দীপ ছাড়াও ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের কর্তা দেবাশিস সোম এবং সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের নামও উল্লেখ করেন আখতার।
আখতারের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে,
১) সরকারি টাকা নয়ছয়।
২) সরকারের সম্পত্তি স্বাস্থ্য ভবন এবং কলেজ কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনকে দেওয়া হয়েছে। ফুড স্টল, ক্যাফে, ক্যান্টিনের মতো জায়গা টেন্ডার না ডেকেই বণ্টন। ৩) সরবরাহকারীদের কাজের বরাত দেওয়ার বিষয়ে স্বজনপোষণ।
৪) যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কোটি কোটি টাকার কাজের বরাত।
৫) আর্থিক নিয়মকানুন ইচ্ছাকৃত ভাবে অমান্য করা হয়েছে।
৬) পছন্দের লোকজনের জন্য সুযোগসুবিধা প্রদান।
৭) হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং বৈদ্যুতিক কাজকর্ম রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের বদলে বাইরের সংস্থাকে দিয়ে করানো।
৮) হাসপাতালের মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা সংক্রান্ত কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়েও অনিয়ম।
৯) হাসপাতালের জৈব্য বর্জ্য বেআইনিভাবে বাইরে বিক্রি।
১০) এছাড়া, হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ, পুরসভার চোখ এড়িয়ে বেনামি ব্যবসা চালানো, কোভিডের সময় সরকারের তরফে হাসপাতালের জন্য যে তহবিল তৈরি করা হয়েছিল, তা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছেন আখতার।