রঞ্জনা মণ্ডল : এ রাজ্যের মেধাবী ছাত্রী আত্রেয়ী দাস মহাপাত্র বিদেশে বেশ কয়েকটি গবেষণায় রীতিমতো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন। বর্তমানে আত্রেয়ী ইতালির তোরিনো শহরে ফিয়াট-ক্রাইসলার অটোমোবাইলসের রিসার্চ কনসালটান্ট।
বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমানো এখন বাধ্যতামূলক। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে গাড়ির বাজারে জনপ্রিয় উঠেছে স্বতশ্চালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি (self driven electric car)। এজন্য দরকার অতি উচ্চমাত্রায় দক্ষ বৈদ্যুতিক মেশিন, যা বৈদ্যুতিক গাড়িতে গতি সঞ্চার করে (propelling)। এফসিএ-তে আত্রেয়ীর গবেষণার বিষয় হল, ভবিষ্যতে গাড়ির স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিকীকরণের জন্য যে বৈদ্যুতিক মোটর দরকার হবে, তার জন্য স্থায়ী চুম্বকের ডিজাইন তৈরি করা।
উন্নত কম্পিউটার মডেলিং টেকনিকের সাহায্যে বিশেষ ধরনের খনিজ রেয়ার-আর্থ ব্যবহার করে তিনি নতুন আকৃতির স্থায়ী চুম্বক আবিষ্কারের কাজ করছেন। এর আগে আত্রেয়ী ছিলেন আমেরিকায় মেটেরিয়ালস জেনোম ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এই উদ্যোগের লক্ষ্যে ছিল আরও উন্নত ধরনের পদার্থ সৃষ্টি করা।
যে কোনও হাইপারসোনিক রকেট বা মহাকাশযানকে, বিশেষত পৃথিবীর কক্ষপথে পুনঃপ্রবেশের সময়, তীব্র উত্তাপের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়। এতে তাপ নিরোধক আবরণ হিসাবে কাজ করতে পারে আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার সিরামিকস (ইউটিএইচসি)। আত্রেয়ী তাঁর গবেষণার ভিত্তিতে আগাম একথা বলেছিলেন যে, অক্সিডাইজেশনের দরুন প্রচণ্ড তাপ থেকে নিরাপদ রাখতে মহাকাশযানের গায়ে যে সিলিকা গ্লাসের আস্তরণ দেওয়া হয়, তাতে সিলিকন নাইট্রাইড যোগ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনও কারণে অক্সিডাইজেশনের সময় মহাকাশযানের তাপ নিরোধক মূল আস্তরণে ফাটল ধরলে সিলিকা গ্লাস গলে গিয়ে ওই ফাটল বুজিয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও আত্রেয়ী কাজ করছেন একটা গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ আবিষ্কার নিয়ে। ফেটাল অ্যালকোহল স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার একটা রোগ। এ থেকে দেখা দেয় জন্মগত ত্রুটি যাতে শিশুরা আত্মমগ্নতা বা অটিজমের শিকার হয়। এই রোগের ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণাতেও জড়িত রয়েেছন আত্রেয়ী।
ডানকুনির বাসিন্দা মেধাবী এই ছাত্রী কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে রসায়নে বিএসসি অনার্স এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রির পড়াশোনা শেষ করেন। পরে পিএইডি করেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল কম্পিউটেশনাল মেটেরিয়াল সায়েন্স।