হোমরাজ্যভালোবাসা কারে কয়....

ভালোবাসা কারে কয়….

ভালোবাসা কারে কয়….

সোহম সান্যাল : রবীন্দ্রনাথ ওই কথার পরে জানতে চেয়েছিলেন, “সে কী কেবলই যাতনাময়…?”
তিনি গেয়েছিলেন, “ভালোবেসে সখি একটি চুম্বন দিও।”

একালের বিখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর “ঋভু”র পাতা উল্টে দেখা যাক। তাপসী বললেন, এই বইটি নিয়ে আসিস লাইব্রেরি থেকে আর রবীন্দ্রনাথের চার অধ্যায়।
চার অধ্যায় কী নিয়ে লেখা?
আগে পড়ে ফ্যাল, তারপরে আলোচনা করবো।
নায়কের নাম অন্তু আর নায়িকার নাম এলা।
রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই স্টিমারের ফার্স্ট ক্লাসে চড়ে অনেক জায়গাতেই গেছেন। খবরের কাগজ ফার্স্ট ক্লাস ডেকের উপরে হৈ হৈ করা হাওয়ায় ফড়ফড় করে উড়ছে। আর এলাকে বলছে,
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা/ সেদিন চৈত্রমাস / তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”
সর্বনাশ কেন মা? চৈত্র মাসের সঙ্গে মিল দেওয়ার জন্য লিখেছিলেন?
তাপসী হেসে উঠলেন ।
বললেন , না ঠিক তা নয়। নানারকমের সর্বনাশ হয়।বড় হলে নিজেই বুঝতে পারবে‌।

….ঋভু চোখ খুলতেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলেছে। আবার ফেরার সময়ে ঋভুর কপালে চুমু : শব্দ করা চুমুও খেয়ে গেছে। আবারও ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে।

যদি বা ঘুম হতো অচেনা বাড়িতে প্রথম রাতে, ওই বহরমপুরের সেঁজুতির জন্য সারারাত তার শরীর মনে আলো জ্বলেছে। চাপা আলো। তার তাপ অনুভব করা যায় কিন্তু রোশনী চোখে দেখা যায় না।
ভালোবাসা, প্রেম ( love ), শরীরের সঙ্গে যুক্ত চিরকালই । আদিম কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই বিষয়টি মানুষের ব্যাপক আগ্রহের বিষয়। রাধাকৃষ্ণের প্রেম তো ভারতীয়দের কাছে জনপ্রিয় ও ক্লাসিক সাহিত্য। আবার “কাম সূত্র” তো যৌনতার বৈজ্ঞানিক গীতা, মহাভারত, বাইবেল।

এত কথার গোড়ায় একটা খবর। মালদহে এক যুবক তার মায়ের প্রেমে আপত্তি করেছিল। তো যুবকের মা ও তার প্রেমিক ওকে নাকি খুন করেছে। আলিপুরদুয়ারে এক আদিবাসী মহিলাকে লোকজন মারধর করেছে “অবৈধ সম্পর্ক” নাকি গড়ে উঠেছিল তার!

এক বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করলেন, “কোন মোড়ল ঠিক করে দিলো, কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ কোনটা। বৈধ মানে যা বিধির বাইরে। বিধি তৈরি করলো কারা? ভালোবাসা , প্ৰেম কোনও হিসেব মেনে কবে হয়েছে? ইতিহাসের, সাহিত্যের পাতায় তো আছে, কত কী প্রমাণ। আইন আদালত কত কথা বলেছে। ফ্রয়েড সায়েবের বিশ্লেষণ পড়লেই বোঝা যাবে ভালোবাসা, প্রেম শারীরিক সম্পর্ক কেন হয়? এসব স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে জটিল। সেদিন এই রকম হত, আজও হয় । জীবনের বৈচিত্র্য, রহস্য অনেক সময়ই স্বাভাবিক মনে হয় না। কিন্তু মনস্তত্ব একটা বিজ্ঞান। সব কিছুরই ব্যাখ্যা ও চিকিৎসা আছে।”

ফিরে যাওয়া যাক সম্পর্কের বিষয়ে। রবীন্দ্রনাথের “নষ্ট নীড়” এই সম্পর্কের টানাপোড়েনের কাহিনী। দেবরের সঙ্গে বৌদির প্রেম। সত্যজিৎ রায়ের “চারুলতা” এই উপন্যাসের ভিত্তিতে করা বিখ্যাত ছবি। অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং অন্য অনেকে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ছবি করেছেন।

ঋতুপর্ণ নিজেকে নারী মনে করতেন। তিনি নারী হতে চায় অপারেশনের টেবিলে শুয়ে শেষ পর্যন্ত মারা যান। এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। “সেক্স চেঞ্জ” করে অনেকেই রূপান্তরিত হচ্ছেন। সমকামী, বহুগামিতা আজ আর তেমন আপত্তিকর নয় সারা বিশ্বে। লেসবিয়ানরা সংগঠিত। বহু বিখ্যাত নারী পুরুষ এই ভাগে পড়েন। এঁদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও চিন্তিত। কারণ বহু ভোট আছে এঁদের। ভোটের অধিকার সহ নানান ভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে এঁদের আজ জায়গা পাকা।

ভারতের নানা মহাকাব্যের একটি হল “মহাভারত”। তো মহাভারতের নানা চরিত্র, কর্ণ ও অর্জুনের কথা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে। কুন্তীর সঙ্গে সূর্যের মিলনে কর্ণের জন্ম। সূর্য নাকি দেবতা। কুমারী কুন্তীর সঙ্গে দৈহিকভাবে মিলিত হন ওই “দেবতা” ! এবার কুন্তীর গর্ভে সন্তান এলে ওই দেবতা তো তার বাবা পরিচয় দিলেন না। বেচারি কুন্তী সমাজের বিধিতে এবং লজ্জা লুকোতে নিজের সন্তানকে ভাসিয়ে দিলেন নদীতে। এটা তো কাব্য।

সাহিত্যে বাস্তবের কিছুটা ছায়া থাকেই। তার মানে মহাভারতের লেখকের আমলে, সেই সময়েও নারী-পুরুষদের লুকিয়ে মিলন হত। পুরুষটি পালিয়ে যেত। মেয়েরা সন্তান নষ্ট করত। ঠিক এখন যেমন নার্সিং হোমে গর্ভপাত আকছার হয়। রবীন্দ্রনাথের “কর্ণ-কুন্তী সংবাদ”টা দেখলেই বোঝা যাবে , মহাভারতের কথা তিনি কী ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

ক্রমশ…

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img