আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তার আগে দূষণ থেকে মানুষকে রক্ষা করার অঙ্গীকার নিয়ে অনন্য উদ্যোগ দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের প্রাতঃভ্রমণকারীদের। সরোবর চত্বরে প্রতিদিন ৫টি করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা, যার সূচনা হল আজ থেকে। আজ (০৩.০৫.২৩) পেয়ারা, লেবু সহ ৫ ধরনের গাছ লাগিয়েছেন তাঁরা। লাগানো হবে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছও। বেশি পরিমাণে অক্সিজেন দেয়, এমন গাছও লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন এই প্রাতঃভ্রমণকারীরা। এই কাজে গ্রুপের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ১০০ টাকা দিয়েছেন। অর্থাৎ এই কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ তাঁরা নিজেদের পকেট থেকেই খরচ করবেন।
এই দলে রয়েছেন, রাজ্যে পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষও। তিনি বলেন, “প্রাতঃভ্রমণকারীদের মধ্যে এই উদ্যোগ যেভাবে সাড়া ফেলেছে, তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। শুধু গাছ লাগানোই নয়, সেগুলিকে বাঁচানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই গাছগুলির দত্তক নিচ্ছেন অনেকে।” কেউ কেউ ১০টি পর্যন্ত গাছ দত্তক নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সৌমেন্দ্রমোহনবাবু।
প্রবীণ এই পরিবেশপ্রেমী বলেন, এই সরোবরের কাছাকাছি রয়েছে কমলা গার্লস ও লেক গার্লস স্কুল। সেখানে অনেক মায়েরা আসেন। সেই মায়েরাও গাছগুলিতে নিয়মিত জল দেওয়ার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। আর প্রাতঃভ্রমণকারীরা নিজেরাও প্রতিদিন সকালে নিয়মিত গাছগুলির পরিচর্যা করবেন বলে জানিয়েছেন সৌমেন্দ্রমোহন।
নিম গাছ স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। তাই সরোবরের একটি অংশে আগামী দিনে সারি সারি নিম গাছ লাগানোরও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্র সরোবরের বর্তমানে যা অবস্থা, তাতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরা। লেক ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। জলের স্তর ক্রমশ নামতে থাকায় লেকের একাংশে ইতিমধ্যে চড়া পড়ে গিয়েছে, গত ২৫ বছরে তাঁরা দেখেননি বলে জানিয়েছেন এখানকার প্রবীণ প্রাতঃভ্রমণকারীরা।
প্রায় ১৯০ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর। এর মধ্যে জলাশয় রয়েছে ৯০ একর। কলকাতার আর কোথাও এ ধরনের জলাভূমি নেই।
পরিবেশবিদদের মতে, এই লেক শুকিয়ে গেলে, দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে তার প্রভাব পড়বে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশের ধুলোবালি এই লেকের জলই টেনে নেয়। অর্থাৎ দক্ষিণে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে এই লেকের বড় ভূমিকা রয়েছে।
রবীন্দ্র সরোবর জাতীয় সরোবরের মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ এখন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তবে এই সরোবরের দেখাশোনা করার দায়িত্ব কেএমডিএ-র। তাই নজরদারির ক্ষেত্রে কেএমডিএ-র বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে।