পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানদের বিশ্বমানের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া। সেই লক্ষ্যপূরণে প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। আর এই অর্থ সংগ্রহের জন্য এভারেস্টের বেস ক্যাম্প অভিযানের জয়সোয়াল দম্পতি। বিকাশ আর মধুরিতা জয়সোয়াল। দুজনেই বেড়ে উঠেছেন কলকাতায়। বর্তমানে তাঁরা লন্ডন প্রবাসী সফল ব্যবসায়ী দম্পতি।
কলকাতার লাগোয়া জেলা উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে তাঁরা ইতিমধ্যে চালু করে দিয়েছেন ‘গ্যালাক্সি গুরুকুল’ নামে আন্তর্জাতিক মানের এক স্কুল, যেখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা।
স্কুলের পরিকাঠামোর আরও উন্নতি ঘটাতে চান জয়সোয়াল দম্পতি। সেই লক্ষ্যে অর্থ সংস্থানের জন্য অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন তাঁরা। এভারেস্ট বেস ক্যাম্প অভিযানে সঙ্গী করতে চান স্কুলের গণ্ডি না পেরনো তাঁদের দুই সন্তান ভিভান আর তারান্নুমকে। গ্যালাক্সি গুরুকুলের জন্য তাঁরা ৫০ লক্ষ টাকা অর্থ সংগ্রহ করতে চান।
জীবনের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না বিকাশ জয়সোয়ালের। তাঁর নিজের কথায়,”আমি একটি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। বাবাকে হারিয়েছি জন্মের আগেই। আমার মা, আমি, ভাই ও বোন সকলেই দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়েছি। টাকার অভাবে দু’বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, পড়াশোনায় ছেদ পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এমনও দিন গেছে যে, দুই বেলা খাবার জুটবে কি না, তা নিশ্চিত ছিল না।”
তাঁর মধুরিতাও গড়পড়তা বাঙালি পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। জীবনের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন দুজনই চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন।
নিজেদের ব্যবসার ক্ষেত্র গ্যালাক্সি অফ হোম ইতিমধ্যেই ভারত ও ব্রিটেনে অফিস খুলে কাজ করে চলেছে। ব্রিটেনের টিমে রয়েছে পঞ্চাশের বেশি কর্মী আর ভারতের অফিসে রয়েছে তিরিশের বেশি কর্মী। ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ আর জুম কলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দুই দেশে তালে তাল মিলিয়ে কাজ করে চলেছে এই সংস্থা।
কেন গ্যালাক্সি গুরুকুল? বিকাশ ও মধুরিতার কথায়,”আমরা সফলভাবে গ্যালাক্সি অফ হোম তৈরি করার পর ঠিক করি যে, সমাজকে ফিরিয়ে দেব সেই সাফল্য যা আমরা পেয়েছি। আমরা একটি ফুড ব্যাংক তৈরি করার কথা ভাবি কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্কুল তৈরির সিদ্ধান্ত নিই। একটি স্কুল সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ফারাক গড়ার ক্ষমতা রাখে। শিক্ষার ওপর কিছু হয় না। এখন আমাদের সবচেয়ে কঠিন লড়াই হল, পিছিয়ে পড়া পরিবারের বাচ্চাদের স্কুলমুখী করা।”
এভারেস্ট বেসক্যাম্প পৌঁছানোর জন্য ১৫০ দিনের প্রস্তুতি পর্ব চলছে জয়সোয়াল পরিবারের। ১৪ সপ্তাহের প্রস্তুতি পর্বে ব্রিটেনের ১৪টি পাহাড়ে ইতিমধ্যেই সফলভাবে ট্রেক করেছে জয়সোয়াল পরিবার। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার স্টেপ পরিবারের সকলকেই করতে হচ্ছে। কোনোভাবেই নিজেদের প্রস্তুতিতে এতটুকু ফাঁক রাখতে নারাজ এই দম্পতি।
বর্তমানে স্কুলটিতে মৌলিক পরিকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। যেমন ডেস্ক, লাইব্রেরি, কম্পিউটার রুম, খেলার মাঠ ও অন্যান্য। এখন সেখানে ৩০০ ছাত্রছাত্রীর পড়ার সুযোগ রয়েছে। তা বাড়িয়ে ৬০০তে নিয়ে যেতে চান বিকাশ ও মধুরিতা জয়সোয়াল। আপাতত তাঁদের লক্ষ্য, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বিশ্বমানের শিক্ষাদান।
জয়সোয়াল দম্পতির আশা, এভারেস্ট বেসক্যাম্পে পৌঁছনোর লক্ষ্য সফল হলে এবং ঠিকভাবে অর্থের সংস্থান হলে, অনেকগুলো শিশুর জীবন বদলে যেতে পারে। সেইসঙ্গে সুন্দর নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে তারা এগোতে পারে।