শিশির ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা
প্রদীপ জ্বালানোর আগে থাকে সলতে পাকানোর ইতিহাস । তেমনি সমস্ত রকম শিল্প সৃষ্টি বিশেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রস্তুতি পর্বটি হয় জটিল ও প্রলম্বিত। সেই সঙ্গে চিত্তাকর্ষকও বটে । এমনি এক নাটকীয় এবং চমক লাগানো প্রস্তুতির গল্প আজ আপনাদের শোনাবো ।
সময়টা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না পরিচালকের। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী। জন্মের কয়েক দিনের মধ্যে সন্তানের মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি । বেশ কয়েক মাস চেষ্টা করে কোনওমতে ‘সানিসাইড’ নামে তিন রিলের কমেডি ছবিটি শেষ করেছেন । নতুন কোন কাহিনী মাথায় আসছে না । অথচ তিনি প্রতিবারই একটি ছবির কাজ শেষ হলেই নতুন ছবি নিয়ে ভাবনা , চিত্রনাট্য রচনা শুরু করে দেন । ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি পাচ্ছেন না । এ হেন ভগ্ন- হৃদয় পরিচালক চার্লি চ্যাপলিন উপস্থিত হলেন অরফিউম রঙ্গালয়ে , নতুন কোনও অনুষ্ঠান দেখে যদি মনের অশান্তি দূর হয় । অনুষ্ঠান শুরু হল। কিছুই মনে দাগ কাটছে না। এমন সময় মঞ্চে এল একটি ছোট ছেলে। এ তো আসা নয়, যেন আবির্ভাব। তার নাচের ভঙ্গি দর্শককে মাতিয়ে দিল। অবিশ্রাম করতালিতে প্রেক্ষাগৃহ মুখরিত হোল । কি স্বচ্ছন্দ তার চলাচল। দর্শকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার কি অবিশ্বাস্য সহজাত ক্ষমতা! চার্লি বিস্মিত, মুগ্ধ। মনে পড়ল তাঁর ছেলেবেলার কথা। তিনিও তো এমনি করে প্রথম রাতে নাচে গানে মাতিয়ে দিয়েছিলেন দর্শকদের । কে এই ছেলেটি ? একে তার দরকার । কেন দরকার ? এই মুহূর্তে তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। তবু ভাবলেন একে তাঁর খুবই দরকার । কি নাম ছেলেটির ? জানা দরকার । জানলেন । তার নাম জ্যাকি কুগান।
পরের দিন অনেক উৎসাহ আর আশা নিয়ে স্টুডিওতে উপস্থিত হলেন। স্টুডিয়োয় কুশীলবদের সঙ্গে আড্ডা, ভবিষ্যতের নানা পরিকল্পনা সবই হল । সেটগুলো দেখলেন , নতুন সেটের কথা ভাবলেন । চুপ করে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলেন । কিন্তু কোন কাহিনীই যে মাথায় আসছে না । নতুন ছবির তালিম দেবার জন্য সবাইকে জড়ো করলেন । চিত্রনাট্য নেই । কী নিয়ে আলোচনা হবে ? শুরু হল নানান গল্প । এমনি করে একটি সপ্তাহ কেটে গেল । হঠাৎ একদিন মনে পড়লো অরফিউম রঙ্গালয়ে বাচ্চা ছেলেটির নাচের কথা । সবাইকে বললেন সেই ছেলেটির কথা । তার নাচের কথা। মনে মনে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। একটি ছোটো ছেলের কী অপূর্ব নাচই না তিনি সেদিন দেখেছেন । কী তার নাচের ভঙ্গি ! কী সপ্রতিভ ছিল সে ! এমনটি সহজে দেখা যায় না । তাঁর মুখে ছেলেটির নাচের বর্ণনা শুনে প্রত্যেকেই কৌতূহলী হয়ে ঊঠলো । একজন জিজ্ঞসা করল, কে এই ছেলেটি । জ্যাকি কুগান। বললেন তিনি । বয়স মাত্র চার। অন্য একজন বলল , ওহো ! আজকের কাগজেই ওর কথা পড়লাম । ROSCOE ARBUCKLE ওঁর একটা ছবিতে অভিনয়ের জন্য ছেলেটির সঙ্গে চুক্তি করেছেন । কী ! চার্লির সমস্ত শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেল। তিনিও তো ঠিক এটাই করতে চেয়েছিলেন । সেদিন ওর নাচ দেখতে দেখতে ঠিক এ কথাটাই ভাবছিলেন তিনি ; এই বিষ্ময় বালকটিকে নিয়েই তাঁর পরবর্তী ছবিটি করবেন। মনে হচ্ছিল ওকে ভেবে ইতিমধ্যে কত কাহিনী তিনি ঠিক করে রেখেছেন। এখন কী উপায় ? আরবাকল নিরঘাত এই ছেলেটিকে নিয়ে একটি অসাধারণ ছবি তৈরি করবেন । বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পরিচালকের শিরোপা পাবেন তিনি। চার্লি তাঁর ভাবা কাহিনী – একটি বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে ভবঘুরে বাবার জীবন। ছেলেটি ঢিল মেরে একটার পর একটা জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে আর তার বাবা চার্লি সেই কাঁচ সারিয়ে দু পয়সা কামাই করছে। বস্তিতে ছেলেটি বড় হয়ে উঠছে, তাকে ঘিরে নানা মজার ঘটনা , সুখদুঃখের টানাপোড়েন ; বার বার মনে করছিলেন। ভুলতেই পারছেন না যেন। পুরো ছবিটিই হবে ভবঘুরে বাবা আর তাঁর বিচ্ছু ছেলেটিকে নিয়ে। কিন্তু এ তো এখন নিছক কল্পনা। কাতর মন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। ঘুরে ফিরে একই ভাবনা আসছে। কাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় নানা ঘটনা সার বেঁধে মনের আনাচে কানাচে উঁকি মারছে। কিন্তু সব শেষে দীর্ঘশ্বাস। হা-হুতাশ। পরের দিনও বিষন্ন মন নিয়েই স্টুডিওতে এলেন। সবাইকে নিয়ে গল্প করছেন। নতুন কাহিনী শোনাচ্ছেন । কিন্তু ঐ কাহিনী ভুলতে পারছেন না। মূল কাহিনীর সঙ্গে সারাক্ষণ নতুন নতুন ঘটনা সংযুক্ত হচ্ছে। এ যে তাঁর স্বপ্নের ছবি! কোন দিনই কি এই ছবিটি করা সম্ভব হবে ? ঐ বালকাটি ছাড়া এই ছবি যে অসম্ভব । তাঁর এই অসহায় অবস্থা দেখে উপস্থিত অনেকে তাঁকে সান্ত্বনার বাণীও শোনালেন । কেউ কেউ অন্য কোনও বালকের কথা ভাবার পরামর্শ দিলেন । চার্লি অনড় । তিনি জানেন এই ছবিতে অন্য কাউকে ভাবা যাবে না। কিন্তু তিনি কি তাকে পাবেন ? কি ভাবে পাবেন ? চার্লি যখন প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন ; স্টুডিয়োর প্রচার দপ্তরের একজন ছুটে এসে জানালো তিনি ভুল খবর পেয়েছেন। আরবাকলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে জ্যাক কুগানের । সে জ্যাকি কুগানের বাবা । চার্লি আশার আলো দেখতে পেলেন । চিৎকার করে বললেন , ছেলেটিকে আমার চাই । নির্দেশ দিলেন জ্যাক কুগানকে স্টুডিওতে নিয়ে আসতে হবে । সাবধান করে দিলেন তাঁর এই পরিকল্পনা যেন আর কেউ জানতে না পারে। এমন কি জ্যাককেও যেন ব্যাপারটা জানানো না হয় । প্রথমে ফোনে চেষ্টা করা যেতে পারে। খুবই সতর্কতার সঙ্গে । চার্লির ভয় আরবাকল কিছু আঁচ করলে সবটাই ভেস্তে যেতে পারে । কিন্তু জ্যাককে ফোনে পাওয়া গেল না ; বাড়িতে নেই , স্টুডিওতে নেই, কেউই ওর কোন হদিস দিতে পারছে না । চার্লি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছেন । হতাশ হয়ে ভাবছেন তাঁর এই স্বপ্নের ছবি আর বোধহয় করা হবে না । এমন সময় খবর এলো পাওয়া গিয়েছে,, জ্যাককে পাওয়া গিয়েছে । ছুটে স্টুডিয়োর বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। জ্যাককে দেখে তার উপর লাফিয়ে পড়লেন । হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘ এমন সুযোগ হাত ছাড়া কোরো না, জীবনে একবারই এরকম সুযোগ আসে । তোমার ছেলে এই একটি ছবি করেই বিশ্ববিখ্যাত হয়ে যাবে ।এ আমি তোমাকে ………জ্যাক মৃদু হেসে বলল ঐ ক্ষুদে বিচ্ছুটাকে আপনার দরকার ! তা আপনি পাবেন’ । ও নিজে সুযোগ না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও চার্লির ক্ষমতার ওপর তার অগাধ বিশ্বাস। ‘কিন্তু ও তো কোনোদিন অভিনয় করেনি ।‘ বাচ্চাদের আর কুকুরকে দিয়ে সবচেয়ে ভালো অভিনয় করানো যায় । চিন্তা কোরো না , ওকে আমি শিখিয়ে নেবো , ও খুবই সপ্রতিভ’ , শান্ত আর স্থিরভাবে চার্লি বললেন ।
দ্বিতীয় পর্ব
শুরু হল কুগানকে অভিনয়ে তালিম দেওয়া । চিত্রনাট্য অনুযায়ী তাকে অভিনয় করতে হবে। মঞ্চে দর্শকদের সামনে সপ্রতিভ হলেও , ক্যামেরার সামনে সঠিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারবে তো? ইমসনকে সঠিক মাত্রায় বাস্তবানুগ করে অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যক্ত করার কলাকৌশল আয়ত্ত করতে হবে যে ! চার্লির প্রত্যাশা অনুযায়ী কূগান দ্রুত মূকাভিনয়ে পারদর্শী হয়ে উঠল । ক্যামেরার সামনে মনের ভাব ফুটিয়ে তুলতে ওঁর জুড়ি পাওয়া যেন ভার । মনে করুন কিডের সেই অভাবনীয় দৃশ্য ; ঢিল মেরে ছোট ছেলেটি একটার পর একটা জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে , পুলিশের হাতে হঠাৎ ধরা পড়ে তার হতভম্ব অবস্থা , পুলিশকে বোকা বানিয়ে এক ছুটে পালিয়ে যাওয়া; এসব দৃশ্যে বিস্ময়কর নৈপুণ্যের সঙ্গে অভিনয় করল কুগান। আজও দর্শক সেই অভিনয় দেখে ছেলেটির জানালার কাঁচ ভাঙ্গা দুষ্টুমি ভেবে প্রশ্রয় দেন , সস্নেহে হাসেন, পুলিশ আসতে দেখে আতঙ্কিত হন , ছেলেটি দ্রুত পালিয়ে গেলে পুলকে, আবেগে প্রেক্ষাগৃহের সিটে গা এলিয়ে দেন । স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন । সবটাই যে এত আয়াসে সম্ভব হয়েছে তা নয় । কোনও কোনও অংশ বাতিল করতে হয়েছে । বাতিল করা সম্ভব ছিল না, এমন সব দৃশ্য গ্রহণে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে । দুষ্টুমির মেজাজে কান্নার শট না দেওয়া , খেলে বেড়ানো, এগুলো তো ছিলই । এক,দুই, তিন না শট ঠিক হচ্ছে না ; সময় নষ্ট হচ্ছে , নষ্ট হচ্ছে ফিল্ম, চার্লি চিন্তিত । ‘জ্যাকিকে তার বাবার কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে অনাথ আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । পুলিশ , ছেলেটি আর তার বাবার মধ্যে টাগ অফ ওয়ার চলেছে । ছেলেটির মুখে আতঙ্ক, অসহায় দৃষ্টি , দু চোখ ভরে কান্না ; এই সব অভিব্যক্তি দরকার । কোথায় কি! ও হেসেই চলেছে । ছুটে বেড়াচ্ছে । সময় নষ্ট হলে, শট নষ্ট হলে ছবির খরচ বেড়ে যায় । চার্লির মাথায় হাত । কি করবেন ? ধমক দিতে পারছেন না, বাচ্চাদের তিনি যে ভীষণ ভালবাসেন ! চার্লির অসহায় অবস্থা দেখে জ্যাকির সত্যিকারের বাবা জ্যাক বললেন , চিন্তা করবেন না, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি । ও ঠিক কাঁদবে, আপনি যেমনটি চাইছেন ঠিক তেমনটিই করবে । ‘ ওকে ধমক দেবেন না কিন্তু ! মারবেন না ! , চার্লি তাকে সতর্ক করে দিয়ে ভয়ে ভয়ে আড়ালে চলে গেলেন । কিজানি যদি লোকটা ছেলেটার মনে কোন আঘাত দেয় । ড্রেসিং রুমে বসে আছেন । এমন সময় ছেলেটির কান্নার আওয়াজ পেলেন । চার্লি ছুটে সেটে এলেন । জ্যাক বললেন আমরা তৈরি। দৃশ্যটি গ্রহণ করা হল । যাঁরা কিড দেখেছেন,তাঁরা নিশ্চয়ই মনে করতে পারছেন এই অসাধারণ দৃশ্যটি । দৃশ্যটি গ্রহণ করা হলে চার্লি ছেলেটিকে কোলে নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললেন,বাবা বলেছেন ঠিকমত অভিনয় না করলে তোমাকে সত্যি সত্যি অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে? কেউ তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে না । আর কেঁদো না । চার্লির আশ্বাস শুনে সে তাঁর কানে কানে বলল , আমি জানি বাবা আমাকে বোকা বানিয়েছে। এই বলে আবার কান্না । এবার প্রতারিত হওয়ার জন্য কান্না । এমনি নানা মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিন শুটিং শেষ হল।
তৃতীয় পর্ব
এবার আমরা এসে গিয়েছি প্রস্তুতির শেষ পর্বে । ব্যক্তি জীবন কীভাবে শিল্পীজীবনে নানা বাধার সৃষ্টি করে ,এই পর্বে তার কিছু নিদর্শন আমরা পাব ।
ছবির শেষ পর্বে শুরু হল সম্পাদনার কাজ । চলচ্চিত্র শিল্পের ভাষায় যাকে বলে পোস্ট প্রোডাকশন । এই মুহূর্তে আরও একটি পর্ব শেষ হওয়ার মুখে । শুটিং শুরু হবার সময় যার সূচনা। চার্লির প্রথমা স্ত্রী মিলদ্রেদ হ্যারিসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া। হ্যারিস চার্লির কাছে এক বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন ; তিনি তা মেনেও নিয়েছেন। এ পর্যন্ত সবই ঠিক চলছিল । কিন্তু হ্যারিস আরও অর্থ আদায়ের জন্য বিখ্যাত পরিবেশক ফার্স্ট ন্যাশনাল (First National)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চার্লির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন দ্য কিডের স্বত্ব দখল করার জন্য। এর ফলে ফার্স্ট ন্যাশনাল স্বল্প মূল্যে তাঁদের শর্তে দ্য কিড ছবিটি প্রদর্শনের স্বত্ব কিনে নিতে পারবে। ওরা জানত হ্যারিস টাকার জন্য ওদের সব শর্তই মেনে নেবেন। চার্লি ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। আইনজ্ঞের পরামর্শে তিনি তৎক্ষণাৎ ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে অন্য রাজ্য সল্টলেক সিটিতে চলে গেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন শুট করা পাঁচশোটি রিল যার মোট দৈর্ঘ্য চার লক্ষ ফুট। ঠিক করলেন এখানে বসেই সম্পাদনার কাজ শেষ করবেন। ক্যালিফোর্নিয়ার আইন সল্টলেক সিটিতে প্রযোজ্য হবে না। তিনি নিশ্চিন্ত মনে তাঁর প্রিয় ছবির, স্বপ্নের ছবির সম্পাদনার কাজ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু কাজটা খুব একটা সহজ হল না। নানা অপ্রত্যাশিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হল। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য হোটেল ও একটি খুব সাধারণ স্টুডিয়োতে সম্পাদনা করতে হতো। ফিল্ম অতিমাত্রায় দাহ্য বলে রিলগুলো হোটেলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। হোটেলের লোকজনের চোখে পড়লেই বিপদ। পুলিশ দিয়ে সব বাজেয়াপ্ত করে নেবে । এ জন্য বিছানা, স্নানের ঘর,অন্যান্য আসবাবপত্র এমনকি কমোডের মধ্যেও রিল রাখা হচ্ছিলো । চিহ্ন দেওয়া থাকলেও সময়কালে সঠিক রিল খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হতো। উদর পিণ্ডি ভুঁদোর ঘাড়ের ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার। এজন্য ‘কনটিন্যুটি’ বজায় রাখতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল । যাই হোক শেষপর্যন্ত সম্পাদনার কাজও শেষ হোল । কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে চার্লি যেন ঘোরের মধ্যে কাজ করে গেলেন । কাজ শেষে বুঝলেন তিনি পেরেছেন, এ ছবি সর্বকালের একটি শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পাবে । এবার অ্যাসিড টেস্ট । একটি সাধারণ প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নিয়ে সকল দর্শকদের সামনে ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা হল। প্রেক্ষাগৃহ প্রায় পূর্ণ , ছবির প্রদর্শন শুরু হোল । চার্লির শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা । ছবি শুরু হল; ছবির নাম ,কুশীলবের নাম দেখান হয়ে গেল ।কাহিনী শুরু হয়েছে । চার্লি স্তম্ভিত । প্রেক্ষাগৃহে কোন শব্দ নেই। তাহলে ? তাহলে দর্শক কি তার এই ছবি প্রত্যাখ্যান করবে? দরিদ্র মাতা তার সন্তানকে গাড়ীতে রেখে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেল। দুষ্কৃতীরা শিশুটিকে নিয়ে ডাস্টবিনের কাছে অবহেলাভরে ফেলে দিল। দর্শকের প্রতিক্রিয়া কোথায় ? এবার ভবঘুরে চার্লির প্রবেশ । মৃদু গুঞ্জন যেন শোনা যাচ্ছে ? চার্লি কান খাঁড়া করে আছেন। ছবি এগোচ্ছে গুঞ্জন ক্রমশঃ সশব্দ হচ্ছে। এবার মাঝে মাঝে করতালিও পড়ছে যেন ? জানালার কাঁচ ভাঙছে, ছেলেটা পুলিশকে বোকা বানিয়ে ছুটে পালাল, বাবা- ছেলের নানা মজার দৃশ্য ।হাস্যোচ্ছ্বাস আর করতালি মুখরিত প্রেক্ষাগৃহ। চার্লি যেন তাকে ঘিরে অজস্র মানুষের করতালি শুনতে পাচ্ছেন। তাঁর দু চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি জেনে গেলেন আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।