অভীক চক্রবর্তী (ফ্রাঙ্কলিন, টেনেসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
দু’বছর আগে চৈত্র সেলের সময়, এক নতুনের সন্ধানে ভারতবর্ষ ত্যাগ করি। আমি ভারতীয় নাগরিক (দরকারে কাগজও দেখতে পারবো) এবং কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট। তবে কর্মসূত্রে শেষ ৭ মাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি।
কানাডার তুলনায় এই দেশে কোরোনার প্রকোপ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। ইতিমধ্যেই কোরোনা এ আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছুঁই ছুঁই। সাড়ে ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ কোরোনার কাছে হার স্বীকার করেছে। শেষ ২০ দিনে বোল্টের গতিতে স্প্রিন্ট টেনে সবাইকে ছাড়িয়ে এখন শীর্ষ স্থানে আমেরিকা। এই করোনাকাণ্ডের উপকেন্দ্র কিন্তু নিউ ইয়র্ক। হুগলি নদীর দুই পাড়ে যেমন কলকাতা ও হাওড়া, তেমনি হাডসন নদীর দুই পাড়ে New York ও New Jersey। এ দেশের যা করোনা রোগী, তার প্রায় ৫০ শতাংশই এই দুই শহরের।
আমি থাকি অবশ্য আমেরিকার মাঝামাঝি একটি ছোট্ট শহরে। নাম ফ্রাঙ্কলিন, এটি টেনেসি স্টেটের রাজধানী ন্যাশভিলের থেকে ৩০ মিনিটের পথ।
এখানকার জনঘনত্ব খুবই কম। করোনার প্রকোপও অনেক কম। এখানে রাস্তায় হাঁটলে এমনিতেই social distancing হয়ে যায়। তাই স্থানীয় সরকার এখানে শুধু সমস্ত জমায়েতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ, ট্রেইল ওয়াক, kayaking, টেনিস, গল্ফ ইত্যাদি খেলতে মানুষকে আহবান জানিয়েছে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির কর্মীরা অধিকাংশই বাড়ির থেকে কাজ করছে। জমায়েতের মধ্যে গির্জায় রবিবারের প্রার্থনা বা সমস্ত রেস্তোরাঁ বা ছোটদের খেলার পার্ক আজ প্রায় এক মাস হলো বন্ধ। দৈনন্দিন সামগ্রীর দোকানগুলি খোলা। কিন্তু খোলা থাকছে মাত্র ১২ ঘন্টা, আগে যা ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকতো।
এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা অতুলনীয়। আমি কিছুদিন আগে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, কাশি, ইত্যাদিতে ভুগছিলাম। কিছু না ভেবে সটান হাজির হই উইলিয়ামসন মেডিক্যাল সেন্টার। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা ধরে আমার সোয়াব ও রক্তের বিভিন্ন টেস্ট করে ডাক্তার ঘরে ঢুকে বললেন : “Good news, you are suffering from influenza type A and not Covid-19.” মনে হলো যেন এই যাত্রায় যমরাজকে হালকা ডজ দিতে সক্ষম হলাম।
আমার স্ত্রী ও দুই পুত্র এখনও কলকাতায়। এই সপ্তাহে কলকাতা গিয়ে ওদের নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে সমস্ত প্ল্যান চৌপাট। বড় ছেলে লিও তার ৪ বছরের জন্মদিন পালন করলো একলাই। ছোট ছেলে সিম্বারও মুখে ভাতটাও হয়ে গেল। কিছুতেই থাকতে পারলাম না। তাই মন আজ ভারাক্রান্ত। বাস্তবে যে repeat telecast হয়ে না। যে সময়টা আমার পরিবারকে ছেড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছি, সেটা তো আর জীবনে আসবে না।
বিভিন্ন বাণিজ্য আজ নিম্নমুখী। মার্কিন বেসরকারি বিমান সংস্থা ও হোটেলগুলো ধুঁকছে, আরও কত লোক না জানি দিনে দিনে চাকরি খোয়াচ্ছে। শেষ ৬ মাসে পেট্রোলের (এখানে যাকে বলে গ্যাস) দাম প্রায় ৩০% কমেছে। বিভিন্ন কলকারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ। লকডাউনের প্রভাবে বাজারে এক প্রবল মন্দার পূর্বাভাস গ্রাস করছে ক্রমশ।
আমাকে কোনটা আগে গ্রাস করবে – recession না depression। উত্তর টা সময় দেবে।