বর্ণালী জানা
খোলা রাস্তায় চলতে চলতে যদি মনে হয় আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটা খাদের কিনারে, নীচে অতলান্ত গহ্বর, কিংবা যদি মনে হয় আপনার চারপাশে চারটে দেওয়াল উঠে গেছে—তখন কী করবেন আপনি? ভাবছেন ভোজবাজি নাকি? হ্যাঁ, ভোজবাজিই বটে যেটা ট্রেসি লি স্টাম করে চলেছেন অবিরাম। তাঁর অস্ত্র থ্রি-ডি আর ফোর-ডি পেন্টিং। রাস্তা জুড়ে থ্রি-ডি পেন্টিং করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে নাম তুলে ফেলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার এই শিল্পী। এই কাজে তাঁর সঙ্গী স্বামী সায়ক মিত্র। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে থ্রি-ডি স্ট্রিট স্ট্রিট পেন্টিং আর চক পেন্টিং করাই তাঁর নেশা। নিজের দেশে তো বটেই, স্ট্রিট পেন্টিং-এর জন্য তিনি গেছেন চিন, মেক্সিকো, রাশিয়া। ভারতেও এসেছেন। এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় আমেরিকান সেন্টারের প্যাভিলিয়নের ছবিগুলি তাঁরই আঁকা।
কিন্তু থ্রি-ডি পেন্টিং আর আর ফোর-ডি পেন্টিং ব্যাপারটা আসলে কী? জ্যামিতির নিখুঁত হিসাবে সমতল বা দ্বিমাত্রিক ভ্রম তৈরি করা হয় থ্রি-ডি ছবিতে। তাই খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনার মনে হতে পারে আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন গভীর একটা কুয়োর ওপর। যে কোনও মুহূর্তে পা পিছলে পড়ে যেতে পারেন। আর ফোর-ডি ছবিতে কোনও দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বিশিষ্ট একটা তলের বিভাজন রেখা বুঝতে না দিয়ে একটা দৃষ্টি বিভ্রম তৈরি করা হয়।
ট্রেসি থ্রি-ডি স্ট্রিট পেন্টিং শুরু করে ১৯৯৮ তে। তারপর তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। হোন্ডা, ক্যাডিলাকের মতো নামী-দামী সংস্থাগুলি তাঁকে দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। হোন্ডা সিটির বিখ্যাত থ্রি-ডি বিজ্ঞাপনটি তাঁরই করা।
ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও আর্ট কলেজের আমন্ত্রণে তিনি ছুটে এসেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছেন। সম্প্রতি তিনি ঘুরে গেলেন ঝাড়গ্রামের খোয়াবগাঁ ওরফে লালবাজারে। লোধা-শবরদের এই ছোট্ট শিল্পগ্রামে তিনি করলেন দুদিনের ওয়ার্কশপ। এখানকার আদিবাসী ছেলেমেয়েদের তিনি শেখালেন থ্রি-ডি পেন্টিং-এর কলাকৌশল। শিল্প সৃষ্টির আনন্দে এখানে ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। গরিব গুর্বো মানুষগুলোর কাছে বড় আপন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আর ট্রেসি বললেন, এই আদিবাসী ছেলেমেয়েদের আগ্রহ দেখে তিনি আপ্লুত। সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আবার এখানে আসতে চান তিনি।