শ্যামল সান্যাল : সি ই এস সির বিরুদ্ধে নানামহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। লক্ষ লক্ষ গ্রাহকদের অভিযোগের পাহাড় জমেছে রাজ্য সরকারের কাছে।সিইএসসির দপ্তরেও বহু অভিযাগ গিয়েছে।
এর মধ্যেই আজ রাজ্যের প্রাক্তন বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্তও এই সংস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। এর আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বর্তমান বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চ্যাটার্জি, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিইএসসির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছিলেন।
এরপর আজ মণীশ গুপ্তের মুখ খোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একই ধারণা সি ই এস সি কর্তাদের একাংশের।
কারণ, এই প্রবীণ আইএএস অফিসার রাজ্যের মুখ্যসচিব ছিলেন। আরপিজি গ্রুপ ও সিইএসসির বিষয়ে বহু কথাই তাঁর জানা। বিদ্যুৎ মন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরকে ঢেলে সাজাতে গিয়ে সিইএসসির আরও অনেক অনিয়মের কথা তাঁর নজরে পড়া অসম্ভব নয়।
রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য কম কথার মানুষ মনীশ গুপ্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন ,”সিইএসসির মত কোনও সংস্থার মনোপলি থাকা উচিত নয়। একচেটিয়া ব্যবসা কেন কেউ করবে ? তবে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার।”
তাঁর অভিযোগ, “ঝড়ের সতর্কতা অনেক আগে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিইএসসি তার মোকাবিলায় যথেষ্ট তৈরি ছিল না। কোনও পরিকল্পনাও ছিল না। ফলে লক্ষ লক্ষ বিদুৎ গ্রাহককে চূড়ান্তভাবে নাকাল হতে হয়েছে।”
যাদবপুর বিধানসভা এলাকায় এখনও বহু গ্রাহক সমস্যায় রয়েছেন। তবে ৩ দিনের মধ্যে সব বড় কাজ শেষ করে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন মণীশবাবু।
তাঁর মতে, “রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের এলাকা আরও বাড়লে ভালো হয়। এই নিগম খুবই ভালো কাজ করছে।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিদ্যুৎ সম্পর্কিত দাবিকে তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার গত ১০ বছরে বিদ্যুতের পরিকাঠামো উন্নয়নে ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও।
বাম জমানায় ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল, গ্রামীণ বিদ্যুতের প্রকল্প অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল। কিন্তু মমতা বানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার সেই ছবি বদলে দিয়েছে। এখন আর লোডশেডিং নেই, পাওয়ার কাট অতীতের গল্প হয়ে গেছে।”
এদিকে এসইউসির সংগঠন এবেকা সিইর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে। সিইএসসির বেআইনি কাজকর্মের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে তাঁরা পথে নামতে চলেছেন। রাজ্য সরকারকেও তাঁরা স্মারকলিপি দেবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ নীতির প্রতিবাদ করে দিল্লিতে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন। সব রাজ্যের মুখমন্ত্রীদের কাছেও তাঁরা কেন্দ্রের নতুন বিদ্যুৎ নীতির প্রতিবাদের জন্য অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ চৌধুরী।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ দপ্তরে এখন সাজ সাজ রব। বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর শান্তনু বসুর মত দক্ষ আইএএস অফিসার , বিদ্যুৎ সচিব প্রবীণ আইএএস অফিসার সুরেশ কুমার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার এলাকা বাড়ানোর বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করছেন।
সিইএসসির সরবরাহ ব্যবস্থা রাজ্যের ৫টি জেলায় ছড়িয়ে। নামে কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন, কিন্তু ঢুকে গেছে নানা জেলায়। গত কয়েক বছরে বহুবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সিইএসসি। কিন্তু এই সময়ে কয়লার দাম বাড়েনি। পাশাপাশি সরকারি সংস্থায় বিদ্যুতের দাম কিন্তু বাড়েনি।
হলদিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করেছে সিইএসসি। কিন্তু তার নাম অন্য। ওরা হিসেবে দেখায়, ওই সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে সিইএসসি। কিন্তু ৪ টাকায় কিনে ওই বিদ্যুৎ বেচে প্রায় ৮ টাকায়। লাভের টাকা এ রাজ্যে ওরা ঢালে না। রাজস্থানে দুটো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনেছে। অন্য রাজ্যে মল করেছে, স্পেন্সার নামে। এই মল এখানেও ওরা করেছে। পার্ক সার্কাসের মোড়ে সরকারি জমি দখল করে বানিয়েছে কোয়েস্ট মল।
কিন্তু টিটাগড় ও মুলাজোড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে আর পি জি গ্রুপের সংস্থা সিইএসসি। বিশাল জমিতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করতে চায় গোয়েঙ্কারা।
কিন্তু এঁদের অতীত ইতিহাস বলে, এই কেনা, দখল করে সেই কোম্পানি ছিবড়ে করে ফেলে দেওয়ার কাজই করে আসছে। সেই কথা এর পরের পর্বে ।
সঙ্গে থাকুন…(ক্রমশ)