হোমসাহিত্য-সংস্কৃতিবুদ্ধ ও রাখাল ধনিয়ার গল্প

বুদ্ধ ও রাখাল ধনিয়ার গল্প

বুদ্ধ ও রাখাল ধনিয়ার গল্প

BiswarupBiswarup Mukherjee

একদিন ভগবান বুদ্ধদেব ভিক্ষা করে ফিরছেন, এমন সময় বৃষ্টি নামল, তিনি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সামনের এক গৃহচ্ছায়ে আশ্রয় নিলেন । গৃহস্বামী রাখাল ‘ধনিয়া’ নিঃসম্বল নিরাশ্রয় বুদ্ধকে ব্যঙ্গ করে বলতে লাগলো —

ধনিয়া বললে — আমার ধান কেটে গোলায় ভরা আছে, আমার মাথার উপর ছাদ আছে, আমার ঘরে আগুন জ্বালা আছে, মাহী নদীর তীরে আমি আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে আনন্দে বসবাস করি, আমার কোন অভাব নেই । অতএব, হে মেঘ আজ রাতে তুমি যত ইচ্ছা বর্ষণ করতে পার ।

বুদ্ধ বললেন — আমার ইন্দ্রিয় সংযত, চিত্ত শান্ত, গৃহের প্রয়োজন আমার মিটে গেছে, আমি বাসনাগ্নিকে নির্বাণ করেছি, মাহী নদীর তীরে আমি মাত্র এক রাত থাকব । অতএব — হে মেঘ আজ রাতে তুমি যত ইচ্ছা বর্ষণ করতে পার ।

ধনিয়া বললে — আমার গৃহে অনেক গাভী আছে, তারা আমায় দুধ দেয়, আজ রাতে তাদের মজবুত দড়ি দিয়ে নিরাপদে বেঁধে রেখেছি, তাদের দেখাশোনা করা ও বংশবৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত ষাঁড় পোষা আছে । অতএব — হে মেঘ আজ রাতে তুমি যত ইচ্ছা বর্ষণ করতে পার ।

বুদ্ধ বললেন — আমার কোন পশুসম্পদ নেই, ষাঁড় বা বাছুরও নেই, আমার সাত্ত্বিক ইন্দ্রিয় আমায় নিত্য জ্ঞান দুগ্ধ প্রদান করে, আমি দেহনৌকা সহায় ভবনদী পার করেছি, আমার আর এই নৌকার প্রয়োজন নেই । অতএব — হে মেঘ আজ রাতে তুমি যত ইচ্ছা বর্ষণ করতে পার ।

ধনিয়া বললে — আমার স্ত্রী সচ্চরিত্রা, পুত্রেরা বাধ্য, তারা আমার সেবার জন্য সর্বদাই প্রস্তুত, আমার কোন ভয় নেই । অতএব — হে মেঘ আজ রাতে তুমি যত ইচ্ছা বর্ষণ করতে পার ।

বুদ্ধ বললেন — যেমন করে হাতি ব্যাধের ক্ষুদ্র জাল ছিন্ন করে মুক্ত হয়, আমিও তেমনি নির্বাণ লাভ করেছি, আমার স্ত্রী পুত্রের বন্ধন নাশ হয়েছে । আমি সানন্দে সর্বত্র ভ্রমণ করে বেড়াই । আমার কোন ভয় নেই । অতএব — হে মেঘ আজ রাতে তুমি যত ইচ্ছা বর্ষণ করতে পার।

বুদ্ধের কথায় ধনিয়ার অহংকার চূর্ণ হল, তিনি সপরিবারে বুদ্ধের শরণাগত হলেন ।

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে পূজনীয় স্বামী যজ্ঞেশানন্দ প্রেরিত ।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img