হোমফিচারনেই সংস্কার, অবহেলায় ধ্বংসের পথে বাঁকুড়ার গোকুলচাঁদ মন্দির

নেই সংস্কার, অবহেলায় ধ্বংসের পথে বাঁকুড়ার গোকুলচাঁদ মন্দির

নেই সংস্কার, অবহেলায় ধ্বংসের পথে বাঁকুড়ার গোকুলচাঁদ মন্দির

রিম্পা ভট্টাচার্য, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী

বাঁকুড়ার জয়পুর, এই জেলার তো বটেই, সারা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, তার ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক বিবিধ নিদর্শন বুকে আগলে রাখে।

একদা মল্লরাজাদের প্রতিষ্ঠিত গোকুলচাঁদ মন্দির বা অবহেলায় পড়ে থাকা বারাহী মূর্তি জয়পুরের গর্বের সম্পদগুলির মধ্যে অন্যতম। জয়পুরের দত্ত পাড়ায় একটি উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি হল, দত্ত পরিবারের প্রতিষ্ঠিত একটি টেরাকোটা অলঙ্কৃত নবরত্ন দামোদর মন্দির।

মন্দিরটিতে কোনও প্রতিষ্ঠালিপি নেই। তবুও অলঙ্করণ শৈলী থেকে অনুমান করা যায়, অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ বা ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ইট ও মাকড়া পাথরে মন্দিরটি নির্মিত হয়ে থাকবে। নবরত্ন মন্দিরটি আটটি চূড়া বা “রথ” যুক্ত ও রেখ ধরনের খাঁজ যুক্ত, মাঝের রত্নটি অষ্টকোণ, শীর্ষদণ্ডে পূজিত দেবতার চিহ্ন স্বরূপ চক্র দেখা যায়।

মন্দিরটি টেরাকোটা অলঙ্কৃত, সামনের তিন খিলান প্রবেশ পথের উপর কেন্দ্রীয় খিলানে শ্রীকৃষ্ণ, রাম, সীতা প্রভৃতি ফলক। ডানদিক ও বামদিকের খিলানে রামায়ণের যুদ্ধের দৃশ্য, একদিকে রামচন্দ্র ও রাবণ এবং অপরদিকে লক্ষ্মণ ও ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধরত।

সামনের দেওয়ালে বিবিধ কৃষ্ণ লীলা (বকাসুর বধ, কংস বধ) শিব বিবাহ, দশাবতার ইত্যাদি। মন্দিরের বাম দিকের দেওয়ালেও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শন দেখা যায়। যেমন মহাপ্রভুর সংকীর্তন এবং ষড়ভুজ রূপ শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা, মথুরা গমন এবং একটি অপূর্ব অনন্ত শয্যায় বিষ্ণু মূর্তি।

এই মন্দিরের উপরের তলেও যথেষ্ট অলঙ্করণ দেখা যায়। তার মধ্যে বিবিধ কৃষ্ণলীলা (কালীয়া দমন,বস্ত্র হরণ), মহাভারতের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ‘ভীষ্মের শরশয্যা’ প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে মহিষাসুর মর্দিনী, গজল লক্ষ্মী প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি ফলক।

মন্দিরটি কোনও এক সময় সংস্কারের জন্য রঙ করা হয়েছিল। ফলে বেশ কিছু মূর্তির ওপর রঙের প্রলেপ পড়েছে। সেই মূর্তিগুলি এখন সৌন্দর্য হারিয়েছে। এই মন্দিরের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল প্রবেশ পথের দরজার কপাট। দশাবতারের মূর্তি ফলক খোদিত এই কপাটটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পের নিদর্শন।

মন্দিরের ছাদের উপর বাজনদারের মূর্তি ও চার কোণায় ছাদের জল নিষ্কাশনের মাকড়া পাথরের মকড় মুখ এই মন্দিরের একটি অভিনব দিক। জয়পুরে আগত যে কোনও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে এই মন্দিরটি দ্রষ্টব্যের তালিকায় অবশ্যম্ভাবীভাবে থাকবে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img