নীলার্ণব চক্রবর্তী
জন্মদিন
আকাশের দিকে দুহাত তুলে সে দাঁড়িয়ে
রয়েছে– মুখটাও তার আকাশের দিকে তোলা
বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝম করে,
মুখের উপর দিয়ে বৃষ্টির ধারা নেমে সারা গা পেরিয়ে, পায়ের শরীর পেরিয়ে মাটির উপর এসে পড়ল… তারপর একটা আঁকাবাঁকা
জলস্রোত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জলধারা– সামনে– ওই শহরের দিকে
শহরের এক বহুতল হাসপাতালের বারো তলায় এক অন্তঃসত্ত্বাকে দেখা যাচ্ছে,
তার খুব তেষ্টা পেয়েছে আর কোনও জলই রুচছে না,
এই স্রোত এগোতে এগোতে গিয়ে পৌঁছে গেল ওই বহুতলেরই নীচে,
সেখানে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হবু-বাচ্চার বাবা,
রমণীর প্রিয় জল খুঁজতে খুঁজতে এই যুবকের চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়–
এবার জলস্রোত দেখে সে নেচে উঠল আর একটা কাচের গ্লাসে এক নিশ্বাসে জল তুলে নিল, লিফটে করে পৌঁছে গেল বারো তলায়…
মেয়েটি খেতে পারল সেই জল এই বারে, এক লহমায়, আধ ঘণ্টার মধ্যে এক পুত্র সন্তানের
জন্ম দিল সে…
হ্যাঁ, তারই নাম আজ নীলার্ণব, পেটের ট্রাবলে কম বয়সেই যার চুলে পাক ধরে গেছে, দেহব্যবসায়ীও সে হতে পারবে না কোনও দিন…
কবিতামাধুরী
আমি কবিতার মৃত্যু কামনা করি প্রতিদিন, লিখতে লিখতে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে বলি– মরে যাক এই লেখাটা, মরে যাক… লেখার ঠিক পরই মরুক বেঘোরে…
আমি যে চেয়ারে বসে লিখি সেই চেয়ারটা যেমন আমার নিতম্বের মৃত্যু কামনা করে থাকে, ঠিক তেমন করেই আমি কবিতার মৃত্যু চাই,
কিন্তু যেভাবে আমার নিতম্বকে মেরে ফেলতে পারেনি চেয়ার, পারছেও না, তেমনই কবিতার মৃত্যুকামনা আমার বিফলে যায়…
এই যখন লিখছি, তখনই একজন লম্বা মতো লোক আমার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে
নাহ লোক তো নয়, এ এক ছিপছিপে যুবতী বিশেষ, ব্যালে নাচের পোশাক পরে এসেছে এখানে কেন?… পোশাকের রং কালো…
আমার এ ঘর বহু যত্নে অন্ধকার করে রাখা, অন্তত লেখার সময়, কম্পিউটারের নিদ্রালোক একমাত্র জ্বলে, তাই ঠাহর করতে পারিনি প্রথমে,
অপূর্ব গন্ধ বেরুচ্ছে বুঝি এই মেয়েটির গা থেকে, কিন্তু এ যুবতীটি কে, কে ভাই তুমি… বলো?
ভাল করে চোখ রাখি তার মুখের উপর… ওহ এ তো মাধুরী– মাধুরী দীক্ষিত, নায়িকা আমাদের, আহ… তুমি এলে… কত দিন এক বিছানায়… ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যাচ্ছি… আহ…
মাধুরী আমার চোখের উপর চোখ রেখে কবরের সুর-লাগা সুরেলা গলায় বলে যায়, নীলার্ণব কবিতাগুলোকে মেরে ফেল না, প্লিজ, ওরা তো বেঁচেও যেতে পারে বলো?